বাজেট বক্তৃতায় বর্তমান মহাজোট সরকারের গত ৭ বছরের ধারাবাহিক সাফল্যসহ ভবিষ্যত স্বপ্ন ও প্রত্যাশার মালা গেঁথেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
‘প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় দারিদ্র্যকে সমূলে উৎপাটন, সমাজের সর্বক্ষেতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ, সম্পদের সুষম বন্টন ও সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে কী প্রক্রিয়ায় এগুলো বাস্তবায়িত হবে এবং এগুলো বাস্তবায়নে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোন পদক্ষেপ বা দিক-নির্দেশনা নেই।
গত সাত বছরে আর্থ-সামাজিক খাতে ‘অভূতপূর্ব উন্নয়ন’ ঘটেছে দাবি করে মুহিত বলেছেন, ‘তবে সমৃদ্ধি অর্জনের অভিযাত্রায় অনেকটা পথ এগুলেও আমাদের যেতে হবে আরও অনেক দূর। এ জন্য প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের গতিশীলতা যেন কোন মতেই শিথিল না হয়। স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্ম পরিবেশ এবং চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলেই আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের অপর্যাপ্ত কর্মসংস্থান মোকাবেলায় উচ্চতর হারে প্রবৃ্দ্ধি অর্জনই হবে প্রধান হাতিয়ার। একই সঙ্গে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ বৃদ্ধি প্রাপ্ত আয়ের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, ঘাটতি ও অর্থায়ন এমনভাবে নির্ধারণ করেছি, যাতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট না হয়।’
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ‘উচ্চাভিলাষী’ হবে বলে ইতোপূর্বে বিভিন্ন প্রাক-বাজেট আলোচনায় বলা হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন তিনি।
বরাবরের মত এবারও বাজেটে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ও মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামো অব্যাহত রাখা, সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রাজস্ব নীতি ও মুদ্রা নীতির সমন্বয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাড়ানো, স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার গুণগত সংস্কার ও প্রতিসংক্রমনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এছাড়া আর্থিক খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ‘সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার কৌশল ২০১৬-২১’ প্রণয়ন ও ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়।
একই সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতার ঘাটতির কথা বলা হলেও বাজেটে আর্থিক খাত বিশেষত ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলার বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং খাতে গত কয়েক বছরে যেসব বড় বড় অনিয়ম হয়েছে এগুলোর সর্বশেষ অবস্থা, অর্থ উদ্ধার ও দোষীদের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ –এ সব বিষয়ে কোন কথা বাজেট বক্তৃতায় নেই। এমন কী বেমালুম এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিজার্ভ চুরির বিষয়টিও। একই সঙ্গে বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে বাজেটে তেমন কিছু বলা হয়নি। তবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা এবং নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ‘আধুনিক মন-মানসিকতা সম্পন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিকল্প নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সূত্র: দ্য রিপোর্ট
বিডি-প্রতিদিন/ ০২ জুন ১৬/ সালাহ উদ্দীন