অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি বাজেট বাস্তবায়নের চিত্র সংসদে তুলে ধরে বলেছেন, আপনাদের আমি আশ্বস্থ করতে চাই যে, সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ, মুদ্রা ও আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনার ওপর কোনরূপ বাড়তি চাপ তৈরি করছে না। প্রথম প্রান্তিক শেষে সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই কমেছে (১৩.৫)। অধিক পরিমাণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কমেছে। চলতি অর্থ বছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ২০২ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আজ পেশ করা ত্রৈমাসিক বাজেট প্রতিবেদনে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, আমদানি ও সেবাজনিত ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলেও বৈদেশিক উৎস হতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির কারণে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে অনুকূল অবস্থা বিরাজ করছে। বৈদিশিক মুদ্রা হারের বিনিময় হারের সামান্য অবিচিতি হয়েছে, যা রপ্তানি ও প্রবাস আয়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকারের অর্থব্যয় বেড়েছে ৮.৮%:
সরকারের অর্থব্যয় পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় মোট ব্যয় ৮.৮ শতাংশ বেড়েছে। এসময় বাজেটের মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এরমধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আর উন্নয়ন বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ব্যয় হয়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, সরকারি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকাকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছর অনুন্নয়ন-ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ শতাংশ। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৪৬ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এসব ব্যয়ের মধ্যে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ৩৬ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট এডিপি বিগত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।
আয় বেড়েছে ১৭.১ শতাংশ:
রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বিগত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.১ শতাংশ বেশি। এসময় রাজস্ব আহরাণেরপরিমাণ ৫১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। যা বাজেটের লক্ষ্য মাত্রার ১৭.৮ শতাংশ।
বাজেটের ঘাটতি ৫ শতাংশ:
বাজেটের ঘাটতি পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থ বছর শেষে মোট বাজেট ঘাটতি দাঁড়ায় জিডিপির ৩.১ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে বাজেট ঘাটতি (অনুদান ব্যতিত) প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র হতে জিডিপির ২.৩ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীন সূত্র থেকে জিডিপির ২.৭ শতাংশ সংস্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে বাজেটে উদ্ধৃত্ত রয়েছে ৪ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। বিগত অর্থ বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮১৭ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক বর্হিভূত উৎসের মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে জাতীয় সমঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ৪২.৩ শতাংশ। জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারি ঋণের স্থিতি সহনীয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার