কারাগারে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের মধ্যে মানবেতর দিনযাপনে খালেদা জিয়া নিয়মিত শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ভুগছেন। তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো যে কারাগারে রাখা হয়েছে, সেখানে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আর বিদ্যুৎ চলে গেলে কোনো বৈদ্যুতিক পাখা কাজ করে না, বাতিও জ্বলে না। পরিত্যক্ত এই কারাগারে কোনো জেনারেটর না থাকায় মোমবাতি ও হাতপাখা দিয়ে কাজ চালাতে হয়। এই যে অমানবিকতা, এই যে হৃদয়হীনতা এর কোনো তুলনা নেই! গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহদফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, কারাকক্ষের স্যাঁতসেতে পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানির অভাব, গুমোট আবহাওয়া ও নিয়মিত বিদ্যুত্হীনতার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট ও জ্বর সব সময় লেগেই আছে। প্রতি রাতেই তার জ্বর আসছে। এটা যে কোনো সুস্থ মানুষের জন্য অত্যন্ত অ্যালার্মিং। জ্বরটা যাচ্ছে না তার। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কারাগারে এখন কোনো জেনারেটর নেই। আমরা যখন ছিলাম, তখন শক্তিশালী জেনারেটর ছিল। তখন দেখতাম, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কখনো বিদ্যুৎ যায় না। এখন জেনারেটর নেই। প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বার বার বলেছি, সাধারণ যে নিয়ম আছে, যারা শ্রেণিপ্রাপ্ত, তারা নিজের খরচে অনেক কিছুই নিয়ে আসতে পারেন। এটা আমরাও ভোগ করেছি। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এই সুযোগগুলো না দেওয়ার কারণে তিনি সারা জীবনে যেটায় অভ্যস্ত, সেই ন্যূনতম সুবিধাটুকুও সেখানে পাচ্ছেন না।’
অন্যদিকে কারাগারে এখন রান্নার মানও খুব খারাপ হয়ে গেছে। তার পরিবারের সদস্যদেরও বাইরে থেকে কোনো খাবার নিতে দেওয়া হচ্ছে না। ন্যূনতম মানবিক আচরণ তার সঙ্গে করা হচ্ছে না। প্রথম শ্রেণির বন্দী হিসেবে যা তার প্রাপ্য, তাও তিনি পাচ্ছেন না।
খালেদা জিয়ার স্বজনরা গতকাল (মঙ্গলবার) তার সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘স্বজনরা দেখেছেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। এই অসুস্থতা এমন পর্যায়ে গেছে যে তিনি ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন না। আমরা আগে জানিয়েছিলাম, ওনার বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিউরো প্রবলেম আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আগে থেকেই তিনি নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০ বছর আগে তার দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। দুই চোখে অপারেশন করা হয়েছে। এসব সমস্যার মধ্যে কারাগারে গিয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সেবা থেকে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া চিকিৎসকরা তাকে যে ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দিয়েছেন, তাও তিনি পাচ্ছেন না। তার অসুস্থতা এমন পর্যায় গিয়েছে যে, তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না।’
এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার রক্ত পরীক্ষা, বিশেষ এমআরআই ও সঠিক পরীক্ষা করানো দরকার। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মূল মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন হয়ে গেছে। সেই জামিন ঠেকানোর জন্য সর্বোচ্চ আদালতে গেছে। তারপর জামিন পাওয়ার পর একটার পর একটা মিথ্যা মামলা সামনে নিয়ে আসছে। তিনি যেন বেরোতে না পারেন, সে ব্যবস্থা তারা নিশ্চিত করতে চাইছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে সরকার কারাগারে আটক রাখতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন পাঠিয়েছিল। সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। দেশ-বিদেশ থেকে তার কাছে অনেক অনুরোধ এসেছে, যেন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কিছুই করেননি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেন আগামী নির্বাচনের আগে কারাগার থেকে বের হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করছে সরকার। এজন্য বার বার তার জামিন আটকে দেওয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/ ৩১ মে ২০১৮/ ওয়াসিফ