শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাবে একমত এমপিদের প্রশ্নবানে জর্জরিত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, মিথ্যা, অপপ্রচারে আপনারা সংসদ সদস্যরাও যদি এই পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা করেন, সরাসরি অভিযোগ করেন তাহলে খুবই অবিচার হবে। দয়া করে আপনারা সত্য, ন্যায়বিচার করুন, আপনাদের কাছে সহানুভূতি চাই।
আর এমপিওভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট সমাপনী বক্তৃতায় বলেছেন, পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। অর্থ পেলে আমরা পর্যালোচনা করে এমপিওভুক্তির কাজ অব্যাহত রাখতে চাইবো।
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বৃহস্পতিবার ২০১৮-২০১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে দায়মুক্ত ব্যয় ব্যতিত অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাটাই প্রস্তাবের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে, স্বতন্ত্র সদস্য সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, নূরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, রওশন আরা মান্নান, নুরুল ইসলাম মিলন, পীর ফজলুর রহমান এমপি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১৮ হাজার ১৬৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমাদের শিক্ষকরা এমপিওভূক্তির জন্য রাস্তায় বসে অনশন করছেন। তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। তবে এসব সমস্যার সমাধান না করে বরাদ্দ বাড়িয়ে কী হবে?
ফখরুল ইমাম এ বরাদ্দের বিরোধিতা করে বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। কিন্তু যে মন্ত্রণালয়ে জিপিএ-৫ কেনা-বেচার ঘটনা ঘটে। এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যতক্ষণ এটা ঠিক না করবে, ততক্ষণ টাকা ছাড় করা ঠিক হবে না।
বিরোধী দলীয় এমপির অভিযোগের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জিপিএ-৫ টাকায় বিক্রি হয়। এ ধরনের খবর একটা টিভিতে প্রচার করা হয়েছে। তবে এটা প্রমাণিত হয়নি যে অমুকে জিপিএ-২ পেয়েছিল, তাকে টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ দেওয়া হয়েছে। এ রকম কোনো প্রমাণ নাই। তারপরও আমরা বোর্ড থেকে বুয়েটের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। এছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি কমিটি করেছি। যখনই এসব অভিযোগ আসে আমরা গোপন রাখি না। প্রকাশ করি। টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ পাইয়ে দিছে এমন একটা নাম কি তারা দিতে পারবে? একটা প্রমাণ কি দিতে পারবে? তবে আমি অভিযোগ অস্বীকার করছি না। প্রতিবেদন এলে বলতে পারবো। সরাসরি অভিযোগ করলে খুবই অবিচার হবে।
প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার এসএসসির প্রশ্নফাঁস নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এমনকি মিডিয়াতেও ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও সব ধরনের নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে কমিটি করেছিলাম। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে মাত্র কয়েকটি প্রশ্ন আংশিক, তাও পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পর ফাঁস হয়েছে। সেটা ৩০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন। সেটাও আবার ‘ক’ সেট। আমরা গোপন রাখিনি, তদন্ত করে প্রকাশ করেছি।
এসময় অন্য দেশের প্রশ্নফাঁসের নমুনা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভারতের দিল্লিতে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং রাজ্যভিত্তিক কিছু পরীক্ষা হয়। এবার রাজ্যের কিছু পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে। সিঙ্গাপুরেও প্রশ্নফাঁস হয়েছে। ইংল্যান্ডেও প্রশ্নফাঁস হয়েছে। ইন্টারনেটের যুগে এগুলো সব জায়গায়ই হচ্ছে।
ঘুষ নিয়ে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি নাকি বলেছি, দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে করার জন্য। আমি উদাহরণ দিয়ে বলেছিলাম। দুর্নীতির জন্য ডিআইএ একটা আখড়া ছিল। আমরা সেটাকে ভেঙে নতুন ফরম্যাটে শুরু করেছি। সেদিন অতীতের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলাম, আমরা অভিযোগ পেয়েছি এখানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুষ দিতে হতো, উপর লেবেল পর্যন্তও নাকি দিতে হতো, তখন আমি উপর লেবেল বলতে আমাকে মিন করেছিলাম। উপর লেবেল হলে তো আমি মন্ত্রীই। আমি নাকি সব মন্ত্রীকে বলেছি। এ কথা মোটেই সঠিক না। এই বিষয়টা মোটেই সঠিক না। এটা নিয়ে বারবার নির্যাতন করা হয়। আপনারা সংসদ সদস্যরাও যদি এই পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা করেন... দয়া করে আপনারা সত্য, ন্যায়বিচার করুন, আপনাদের কাছে সহানুভূতি চাই।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম