'দুনিয়ায় এমন একদল বুজুর্গ রয়েছেন—যারা কোন ব্যক্তি বিশেষের যেমন অন্ধ সমর্থন করেন না, তেমন কারো অহেতুক বিরোধিতাও পছন্দ করেন না। তারা কাউকে ভালোবাসলে যেমন ঘোষণা দিয়ে বাসেন না, তেমন কাউকে অপছন্দ করলেও ঢাকঢোল পিটিয়ে করেন না। আমরা সকল রাজনৈতিক দলের কাছে নিবেদন করব—ক্ষমতাকেন্দ্রিক হানাহানি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবেন না।
আজ বুধবার ঢাকার মালিবাগস্থ খানকায়ে মুছলিহীনে অনুষ্ঠিত পীর-মাশায়েখদের বিশেষ সম্মেলনে দেশবরেণ্য খ্যাতনামা পীর সাহেবগণ এসব কথা বলেন।
পীর সাহেবগণ আরো বলেন, আরব-বিশ্বসহ সমগ্র মুসলিম জাহানে বিভিন্ন বাতিল ফের্কা ও মতাদর্শের প্রাদুর্ভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। দ্বীন-ইসলামের খেদমতের নামে চরমপন্থী উগ্রবাদীদের দ্বারা খুব জোরেশোরে তাহরীফে দ্বীন—ধর্মের বিকৃতি সাধন চলছে। তাজদীদে দ্বীন—ধর্মীয় সংস্কার ওলামায়ে হক্কানি ও আউলিয়ায়ে কেরামের কাজ, আর তাহরীফে দ্বীন—ধর্মের বিকৃতি সাধন ইসলামের দুশমন ও ধর্মদ্রোহীদের কাজ।
পীর সাহেবগণ বলেন, ‘দ্বীন-ইসলামের অন্যান্য মৌলিক ফরযসমূহের মতো ‘ইত্তেহাদ’ বা ঐক্যবদ্ধতাও একটি মৌলিক ফরয। এই ফরয তরক করার কারণেই বিশ্বব্যাপী মুসলমান আজ অস্তিত্ব রক্ষার চরম সঙ্কটে নিপতিত। এ অবস্থায় যারা এই ফরযিয়াতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন এবং ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন—তা অনেকটা ‘আমার ছাতার তলে আসো’ ধরনের দলীয় কিংবা গোষ্ঠীগত আহ্বান হওয়ায় ঐক্যের পরিবর্তে তা অনৈক্যই সৃষ্টি করছে।’
পীর সাহেবগণ বলেন, ‘আমরা দলীয় রাজনীতি করিনা, দেশ-জাতি-ইসলামের স্বার্থে যারাই কাজ করে সে মুসলমান কিংবা হিন্দু, সরকারি বা বিরোধীদল যেই হোক, ভালো কাজের স্বীকৃতি দেয়া নৈতিক দায়িত্ব। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না। সকল ধর্মবিশ্বাসী সাংবাদিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীর উচিত এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা।
প্রধান অতিথির ভাষণে হযরত নেছারাবাদী হুজুর বলেন, ওয়ালেদে মুহতারম হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. কোনদিন দলীয় রাজনীতি করেননি। তবে এক্বামতে দ্বীন ও তাবলীগে দ্বীনের খেদমতের নিমিত্ত রাজনীতিকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে তিনি আজীবন দেশে যখন যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার রাহনোমায়ী করেছেন। আমরাও আওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণ ও খেদমতের নিমিত্ত আমাদের মতামত ব্যক্ত করে আসছি। আলহামদুলিল্লাহ, গাউছে যামান হযরত নেছারুদ্দীন আহমদ রহ. থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত হক্কানি আউলিয়ায়ে কেরাম যখন যে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেছে—তা যে পক্ষই গ্রহণ করেছে উপকৃত হয়েছে, অবজ্ঞা করেছে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পীর-মাশায়েখগণের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. এর ছাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত নেছারাবাদী হুজুর, ছারছীনা দরবারের মেঝ হুজুর রহ. এর জাঁনিশীন হযরত মাও. শাহ মুহা. ছাইফুল্লাহ সিদ্দিকী, ছাহেবজাদা হযরত মাও. শাহ্ মুহা. আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার