সংবিধান প্রণেতা ও দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, কোনো পরিবর্তন বৈধভাবে আনতে হলে অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, অবাধ না হয়, জনগণ তাদের মালিকানা থেকে বঞ্চিত হয়। এই নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে কেন্দ্র করে আমরা জনগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠার কাছে নিয়োজিত। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এই আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে। জনগণের বৃহত্তর ঐক্যের সামনে কোনো স্বৈরাচার সরকার টিকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রবিবার ‘ভোটের অধিকারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন ঘোষণা করেন, আমাদের দাবি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন।
কামাল হোসেন আরো বলেন, আজকে ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে, এদেশ আমাদের সকলেরই, কোনো ব্যক্তির না, কোনো দলের না, কোনো পরিবারের না। অতীতে যেমন আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রত্যেকবার সফল হয়েছে এবারো ইনশাল্লাহ সফল হবে। জনগণের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরে আসবে। দেশের মূল্যবান কোনো দাবি আদায় করতে হলে ঐক্যবদ্ধ জনগণের শক্তিতে সেটা আদায় করা যায়। আমরা মনে করি, অলরেডি তো যে অনেকটা সফল এটা আপনারা লক্ষ্য করছেন।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশ যদি জনগণের মালিকানায় না থাকে, তখন পাইকারী হাতে লুটপাট হয়, দেশের সম্পদ পাচার হয়। আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন যে, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুটপাট হচ্ছে। এগুলো যায় কোথায়? বিদেশে যায়। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ আরো বলেন, দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না, নতুন কল-কারখানা হচ্ছে না, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। অর্থাৎ স্বাধীনতার যে প্রতিশ্রুতি সেটা পালন হচ্ছে না। আজকে জনগণে এটা ভালোভাবে উপলব্ধি করছে বলে আমি দেখছি যে, যেখানে কর্মসূচি করি অসাধারণ একটা সাড়া পাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের আন্তরিক আহ্বান করি, জনএণর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করুন। নারী-পুরুষ মিলে হাজার কোটি নাগরিকদের ঐক্যের মধ্য দিয়ে সেই শক্তি আমরা পাবো যার সামনে কেউ বা কোনো স্বৈরাচার নাই যে, আমাদেরকে বঞ্চিত করতে পারবে, কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না। এই ঐক্যের শক্তি নিয়েই আমারা জনগণের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করবো।
দেশে গায়েবি মামলা দায়েরের কঠোর সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্টেও এই প্রবীণ আইনজীবী বলেন, হাজার হাজার গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিলো সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে, নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলা-মোকাদ্দমা দেয়া যাবে না। কাউকে তো মুক্তি দেয়া হয়নি বরং উল্টো নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। দেশের মানুষ ‘অসহায় বোধ করছে’ বলে এ ব্যাপারে সকলকে এক হওয়ার আহ্বানও জানান গণফোরাম সভাপতি।
সুলতান মুহাম্মদ মনসুর বলেন, দেশ চলছে ভোটহীন সংসদ ও সরকারের মাধ্যমে। দেশের মানুষ যখন কথা বলতে পারছে না, তখন তিনি উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছেন। ট্রয় যখন পুড়ছিল তখন নিরো এমনিভাবে বাঁশি বাজিয়েছিল।
মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, স্বৈরশাসক আইয়ুব খান উন্নয়নের দশক ঘোষণা করেছিল। ছাত্র সমাজ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। জনগণ উন্নয়নের আগে গণতন্ত্র চেয়েছে। তাই সত্তরের নির্বাচনে বাংলার জনগণ আইয়ুবের উন্নয়নের শ্লোগান বঙ্গপোসাগরে ছুড়ে ফেলেছিল।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিকের পরিচালনায় মানববন্ধন সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আবম মোস্তফা আমিন, গণফোরামের আহম শফিক উল্লাহ, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম প্রতীক, বিকল্পধারার শাহ আহমেদ বাদল, এনপিপি‘র মোস্তাফিজুর রহমান, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ন্যাপ ভাসানীর গোলাম মোস্তফা আখন্দ, ভাসানী ফাউন্ডেশনের সিদ্দিকুল ইসলাম, গণদলের গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দলের শামসুল আলম চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের শওকত আমীন প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ অক্টোবর, ২০১৮/মাহবুব