চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টা তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গতকাল তাদের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার সার্বিক মোটিভ নিয়ে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও। তদন্তে দেখা গেছে, বিমানের অভ্যন্তরে রক্তের এবং গুলির চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের সময় এই গুলি লাগতে পারে। ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত সংস্থা চট্টগ্রামের কাউন্টার টেররিজমের একটি দল বিমানটি পরিদর্শন করেছে। এদিকে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত যুবক পলাশের লাশ গতকাল দাফন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ‘ময়ুরপঙ্খী’ ছিনতাই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তদন্তে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদী ওরফে মাহিবি জাহানের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না তা সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ছাড়া পলাশ আহমেদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিকসহ নানান বিষয়ও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তদন্তে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তদন্ত ভার পাওয়ার পর এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।’ তিনি বলেন, ‘সব দিক চিন্তা করে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। সম্ভাব্য সব দিক চিন্তা করে বিমান ছিনতাই চেষ্টা মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।’ মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একাধিক দল এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে। সম্ভাব্য কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে মামলার তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা, নেপথ্যে হোতাদের খুঁজে বের করা, বিমানটি ছিনতাই পরবর্তী পরিকল্পনা, পলাশের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, একটি মামলা তদন্ত করতে গেলে নানান দিক চিন্তা করতে হয়। তাই সব সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখতে কাজ করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এরই মধ্যে পলাশের ব্যক্তিগত কিছু তথ্য হাতে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার বিষয়ে নানান তথ্য উঠে আসছে প্রতিনিয়ত। এ বিষয়গুলোও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।
অবশেষে লাশ গ্রহণ করল পরিবার : অনেক নাটকীয়তার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হওয়া পলাশ আহমেদের লাশ গ্রহণ করেছে পরিবার। সোমবার রাত আড়াইটায় পুলিশ পলাশের বাবা পিয়ার জাহান সরদারকে ছেলের লাশ বুঝিয়ে দেন। সিএমপি’র কর্ণফুলীর জোনের সহকারী কমিশনার জাহেদুল আলম বলেন, সোমবার গভীর রাতে পলাশের বাবা চমেক হাসপাতালে এসে পলাশের লাশ শনাক্ত করেন। পরে আনুষ্ঠানিকা শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। রাতেই পিয়ার জাহান সরদার লাশ নিয়ে বাড়ি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন।
পটকা ফাটিয়ে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা! : উড্ডয়নের পর বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ‘ময়ুরপঙ্খী’-তে ‘পটকা জাতীয় বস্তুর’ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায় পলাশ। এ সময় ছিনতাই চেষ্টাকারীর হাতে অস্ত্রসদৃশ বস্তুও ছিল বলে উল্লেখ করা হয় এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে। সোমবার রাতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়- বিমানটি উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ মিনিট পর একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করে। তার কাছে বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু দেখা যায়। দুষ্কৃতকারী তার কিছু দাবি প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে বলতে থাকে। না হলে বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হবে বলে বিমানের কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের হুমকি দেয়। বিমানে থাকা পাইলট, কেবিন ক্রু এবং যাত্রীদের মধ্যে মৃত্য আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় দুটি পটকা জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটায়। এ পরিস্থিতিতে বিমানটি বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিকাল ৫টা ৪১ মিনিটে বিমানটি বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই জরুরি বহির্গমন পথ দিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুরা দ্রুত বের করা হয়।
দাফন সম্পন্ন : আমাদের নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁও প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহত পলাশ আহমেদের লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় উপজেলার দুধঘাটা এলাকার দুধঘাট কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। পলাশের ফুফাতো ভাই ইব্রাহিম প্রধান জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ শনাক্তের পর মঙ্গলবার ভোর ৬টায় লাশ নিয়ে বাড়ি আসেন তার বাবা পিয়ার জাহান সরদারসহ এলাকাবাসী। সকাল ৯টায় বাড়ির পাশে দুধঘাটা সরদার বাড়ি জামে মসজিদে পলাশের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পলাশের বাবা পিয়ার জাহান সরদার, আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার শতাধিক মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। পরে পৌনে ১০টায় দুধঘাটা কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
বিমানবন্দরের ২৩ কর্মীকে সরানো হয়েছে : বিমান বাংলাদেশের ময়ূরপঙ্খী ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় গত রবিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে দায়িত্ব পালনকারী ২৩ জনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে।
বিমানযাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে : আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্রমণের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যাত্রীদের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। পরিচয়পত্র না দেখালে কোনো যাত্রীকে বিমানে ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারির পর বিমানের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।
গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিমান মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে বিমানসহ সব এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের বিমানবন্দরে বোর্ডিং কার্ড নেওয়ার সময় টিকিটের সঙ্গে ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।
ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র হিসেবে যাত্রীর বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্টুডেন্ট আইডি অথবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিস আইডি গ্রহণযোগ্য হবে। এই অবস্থায় বিমান তাদের যাত্রীদের সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করছে। তা না হলে যাত্রীদের বিমানে ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার