২০ মে, ২০১৯ ১১:২৮

দুই দশক পর ভারতের কারাগারে ভাইকে দেখে আত্মহারা বাংলাদেশি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

দুই দশক পর ভারতের কারাগারে ভাইকে দেখে আত্মহারা বাংলাদেশি

আজবার পিয়েদা

২৩ বছর আগে পরিবার ছাড়া হয়ে গিয়েছিলেন আজবার পিয়েদা। এরপর থেকে এদিক-ওদিক খোঁজ করেও ছেলের সন্ধান পাননি তার বৃদ্ধ বাবা-মা। অবশেষে ভারতের আসামের তেজপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে খোঁজ মিলল আজবারের। রবিবার এই কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিটেনশন ক্যাম্পে অবস্থানরত আজবারের সাথে দেখা করলেন তার ভাই ইকবাল পিয়েদা (২৮)। 

সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা আজবার (৫৫)। ২৩ বছর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন আজবার হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে পড়েন। বাবা আবদুল করিম পিয়েদা ও মা মোমেন খাতুন সমস্ত জায়গায় সন্ধান করেও ছেলের হদিশ পাননি। এরইমধ্যেই কোনভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসামে ঢুকে পড়েন আজবার এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। ভারতের অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০১৫ সালের ১ জুলাই রাজ্যটির ধেমজি জেলা থেকে আজবারকে আটক করা হয়। এরপর ভারতীয় পাসপোর্ট আইন ও ফরেনারস আইনের আওতায় ওই বছরেরই ১৬ নভেম্বর কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় আজবারকে। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছর কারাগারের সাজার মেয়াদ কাটিয়ে আজবারকে প্রেরণ করা হয় তেজপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিটেনশন ক্যাম্পে এবং সেখান থেকেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু মানসিক অবস্থার কারণে নিজের দেশের সঠিক তথ্য দিতে না পারায় গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তাকে ফেরত পাঠানোর পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। এরপরই কারাগার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগেই আজবারের মানিসক রোগের চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর চিকিৎসায় সারা দিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন আজবার। 

এরই মধ্যে আজবারের খোঁজ পান তার ভাই ইকবাল পিয়েদা। বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সেদেশেরই সমাজসেবী কর্মী অমলেন্দু দাস-এর সাথে যোগাযোগ করে ভাইয়ের সাথে দেখা করা ও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। এরপর প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেতে অমলেন্দু দাস যোগাযোগ করেন গুয়াহটিস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার শাহ মোহম্মদ তানভির মনসুর-এর সাথে।  

অবশেষে রবিবার ডিটেনশন ক্যাম্পে গিয়ে ভাইয়ের সাথে দেখা করেন ইকবাল। দীর্ঘ দুই দশক পর হারিয়ে যাওয়া ভাইকে কাছে পেয়ে আত্মহারা হয়ে ওঠেন ভাই ইকবাল। ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইকবাল বলেন, ‘আমার মা আমাকে বলেছিলেন ভাই মানসিকভাবে অপ্রকৃসস্থ ছিল এবং ২৩ বছর আগে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। আমি যখন একেবারে ছোট ছিলাম, ভাই তখন যেভাবেই হোক ভারতে প্রবেশ করে। এত বছর পর তাকে সুস্থ দেখতে পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত।’ 

তেজপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মৃন্ময় দাওকা জানান, ‘আজবার এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সে বাংলাদেশে তার পরিবার ও দেশের ঠিকানা লিখতে পারে। প্রত্যার্পণ সম্পর্কিত সমস্ত নথি তৈরি কাজ শেষ হয়ে গেলে আগামী মাসেই আজবারকে কারাগার থেকে মুক্ত করা হবে।’

গোটা ঘটনায় আজবার নিজেও খুব খুশি। তিনি বলেন, ‘আমি আমার দেশে ফিরে যেতে চাই। আমি আমার মা ও পরিবারের অন্যদের সাথে দেখা করার জন্য মুখিয়ে আছি।’ 


বিডি-প্রতিদিন/২০ মে, ২০১৯/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর