বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে গতকাল রাজধানীতে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনে পুলিশের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে পোশাকশ্রমিকদের পক্ষ থেকে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বের হয়ে তারা আন্দোলন আগামী ২৯ মে পর্যন্ত স্থগিতের ঘোষণা দেন। এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৭ মে থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলমান রেখেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ আন্দোলন চলছে। আজ তারা লংমার্চ টু সচিবালয় কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির আওতায় জাতীয় শ্রমভবনের সামনে থেকে শতাধিক শ্রমিক মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে গেলে তারা কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যান। বৃষ্টি থামার পর তারা আরও শক্তভাবে বিক্ষোভে অংশ নেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনরতরা ‘বেতন চাই, বোনাস চাই, চূড়ান্ত হিসাব আজই চাই’, ‘আমরা চাই না দয়া, চাই ন্যায্য পাওনা’, ‘১৪ মাসের ঘাম কোথায়? টিএনজেড জবাব চাই!’ এমন স্লোগানের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
শ্রমিকদের দাবি, টিএনজেড গ্রুপের ১ হাজার ৫৮ জন শ্রমিকের প্রায় ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। গত রমজানে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন কোটি টাকার পরিবর্তে দেওয়া হয় মাত্র ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা তারা প্রতারণা হিসেবে দেখছেন।
বিকাল সাড়ে ৪টায় কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থানরত শ্রমিকদের মধ্যে থেকে আট সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে যান। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন- এনসিপি শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সমন্বয়কারী শাহ আলম, গার্মেন্টশ্রমিক সংহতির সভানেত্রী তাসলিমা আখতার, শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম এবং শ্রমিক শাহিন। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বের হয়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, সর্বজনীন বদলি এবং জাতীয়করণের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ে কোনো আশ্বাস না দেওয়ায় বড় জমায়েতের ডাক দিয়েছেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, আসন্ন ঈদুল আজহার আগেই তাদের শতভাগ উৎসব ভাতার ঘোষণা দিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেটি তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বাড়ি ভাড়ার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসা ভাতাও সরকারি চাকরিজীবীদের মতো করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন গাজীপুরের গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যদি নিশ্চিত করা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পরবর্তী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে, তবেই তারা এ কর্মসূচি স্থগিত করবেন।