সুরমা আর কুশিয়ারা এই ২ নদীর বেষ্টনীতে সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলা। ওপারে ভারতের করিমগঞ্জ জেলা। সীমান্তবর্তী এই উপজেলা যেন মাদকের এক পাইকারি হাট। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। ভারত থেকে যেভাবে মাদক নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা, তাতে মনে হয় মাদক আমদানির লাইসেন্স পেয়েছে তারা। পাইকারি মূল্যের এই মাদক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের আনাচে কানাচে। তবে প্রশাসন বারবার বড় বড় মাদকের চালান আটক করলেও এর সাথে জড়িত মূল হোতারা রয়েছে ধরা-ছোয়ার বাইরে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদককারবারিরা সীমান্তের কয়েকটি নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। এসব রুট দিয়ে ভারত থেকে তারা নিয়ে আসছে মাদকের বড় বড় চালান। উপজেলার খলাছরা ইউনিয়নের লোহারমহল, সুলতানপুরের ইছাপুর, সহিদাবাদ ও ভক্তিপুর, বারঠাকুরি ইউনিয়নের সালেহপুর, লাড়িগ্রাম, জকিগঞ্জ ইউনিয়নের সেনাপতির চক, মানিকপুর ও ছবড়িয়া, কসকনকপুরের বলরামের চক ও উত্তর আইওর (মনতলা) সহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ভারত থেকে আসছে মাদকের এসব চালান। সীমান্তের ২ কিলোমিটার অন্তর অন্তর রয়েছে বিজিবির ক্যাম্প। তাদের চোখকে কীভাবে ফাঁকি দিয়ে আসে এসব মাদকের চালান তা খতিয়ে দেখার দাবি সাধারণ জনগণের।
যেভাবে আসে মাদক: রাতের আঁধারে চোরাকারবারিরা নদী সাঁতরে ভারতে যায়। নদীর ওপারে অপেক্ষমান থাকা ভারতীয় মাদককারবারি হস্তান্তর করে এসব মাদক। টাকাও লেনদেন হয় তখন নগদে। তবে বেশিরভাগ সময় যাওয়া লাগে না। কখনো ভারত থেকে রশি দিয়ে নদীতে ফেলা হয় প্যাকেট করা মাদক। আর নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরার ছলে সময়বুঝে তুলা হয় নদীর পারে। আবার কখনো পাল্টে তাদের কৌশল। ভারত থেকে কলা গাছের ভেলায় করে পাঠানো হয়। নদীর জলে ভেসে আসা এই ভেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় মাদক।
জানা গেছে, এসব মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত পর্দার আড়ালে থাকা পয়সাওয়ালারা। তারা মাদকের পিছনে টাকার যোগান দেন। ১ লাখ টাকার যোগান দিলে ২ চালান পরে আদায় করেন বড় অংকের টাকা। মূলত এই যোগান দাতাদের ধরতে পারলে বন্ধ হতে পারে জকিগঞ্জের মাদকের এই নিরাপদ রুট।
জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন কত দূর: সম্প্রতি সিলেটে যোগদান করেন পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায়, সাংবাদিকরা জকিগঞ্জকে মাদকের নিরাপদ রুট উল্লেখ করলে, তিনি জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষাপটে তিনি সিলেটের ৫ থানায় বদলি করেন ৫ জন ওসিকে। জকিগঞ্জে প্রেরণ করেন ওসি হিসেবে, সিলেটের মাদক বিরোধি সেলের কর্মকর্তা মীর আব্দুন নাসেরকে। ২ আগস্ট তিনি যোগদান করেন জকিগঞ্জের ওসি হিসেবে। যোগদানের পর ৫ দিনের ভিতরে সকল মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। তার এই আহবানে ৪ মাদককারবারি আত্মসমর্পণও করেন। তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে পরযবেক্ষণে রাখা হয়। অভিযানের শুরুতে তিনি ৫০০ পিস মাদকসহ গ্রেফতার করেন ২ জনকে। এরপর ৮ অগাস্ট জকিগঞ্জে সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন সিলেটের নবাগত পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন। জকিগঞ্জের মাদককারবারিদের বিরুদ্ধে তিনিও কড়া বক্তব্য রাখেন। তবে জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসতে কত দিন লাগবে এই প্রশ্ন জকিগঞ্জবাসির মাঝে।
তবে মাদক কারবারিদের বড় বড় হোতা এখনোধরা ছোঁয়ার বাইরে। গ্রেফতার করা হয়েছে চুনো–পুঁটিদের। ওসি মীর নাসের জানিয়েছেন, নিচু সারির কারবারিদের গ্রেফতার করেই তাদের বড় বড় হোতাদের গ্রেফতারে নামবেন। তথ্য অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন তার, কাছ থেকে কেউ রেহাই পাবে না।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা