১৫ আগস্ট, ২০২০ ১৭:১৩

১৫ আগস্ট জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক এঁকেছে খুনিরা: ইকবাল মাহমুদ

অনলাইন প্রতিবেদক

১৫ আগস্ট জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক এঁকেছে খুনিরা: ইকবাল মাহমুদ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, জাতির পিতার খুনিরা ১৫ আগস্ট জাতির ললাটে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এ কলঙ্কের তিলক বয়ে বেড়াতে হবে। তিনি বলেন, এই জঘন্য হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করে আমি বা আমরা  রাজপথে নেমে আসিনিএটাই আমাদের লজ্জা। খুনিদের বিচার করে লজ্জার আংশিক মোচন হতে পারে, কিন্তু পরিপূর্ণ মোচন কখনই হতে পারে না। 

শনিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুদক চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্ট কালরাতে নিহত সকল শহিদের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কমিশনের আলোচনা সভার বিষয়টি দুদকের জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে। 

ইকবাল মাহমুদ ব্যক্তিগত স্মৃতিমন্থন করে বলেন, আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৪ আগস্ট আরামবাগের এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। পরদিন নতুন জামা পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব, শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতাকে দ্বিতীয়য় বারের মতো দেখতে। হৃদয়ের গভীর ছিল এক চরম উত্তেজনা। কিন্ত ঘাতকদের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড জাতির পিতাকে দ্বিতীয়বার দেখার সৌভাগ্য আর আমার জীবনে ঘটেনি। তাই আমি বলব, কেউ স্বীকার করুক বা না করুক জাতির পিতাকে রক্ষা করতে না পারা এবং হত্যার পরে প্রতিবাদে রাজপথে নেমে না আসতে পারার লজ্জা আমাদের চিরদিন বহন করতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার এক প্রশিক্ষণে জাপান যাই। সেই প্রশিক্ষণের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনে জাপানি এক নারী কর্মকর্তা সবার সামনে আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনারা কীভাবে আপনাদের জাতির পিতাকে হত্যা করলেন? এ প্রশ্নের উত্তর আমি সেদিন দিতে পারি নি। আজও এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। ১৭টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে সেদিন লজ্জিত হয়েছিলাম। সে লজ্জা আজও মোচন হয়নি ।

তিনি বলেন, আমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম। যখনই আইন বা বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা হতো তখন দেখতাম সব আইন ও বিধি-বিধানের উৎস ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত-জাতির পিতার শাসনামলে প্রণয়ন করা। আজ যে আইনের ভিত্তিতে সমুদ্র বিজয় হয়েছে এই আইনও জাতির পিতার শাসনামলে করা। আমাদের অনুধাবন করতে হবে, কতটা দূরদর্শী নেতৃত্ব থাকলে জাতিসংঘ উপস্থাপন করা যায়এমন  একটি আইন তখনই প্রণয়ন করা হয়েছিল। বিস্ময়করভাবে আমরা দেখি আমাদের দেশের সকল কর্মপ্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি জাজ্জ্বল্যমান। সংবিধান থেকে শুরু করে অধিকাংশ মৌলিক আইন ও বিধি-বিধান জাতির পিতার শাসনামলেই প্রণয়ন করা।

তিনি বলেন, দেশের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাতির পিতা দেশের উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করে গেছেন। দেশকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের যে ষড়যন্ত্রকারীরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছিলসেসব ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের দোসররা হয়তো আজও সক্রিয়। রক্ত পিপাসু ষড়যন্ত্রকারীদের কাজই দেশের অগ্রগতিকে বাধা দেওয়া।

তিনি বলেন, জাতীয় শোক দিবস বার বার আসবে। আমাদের স্মৃতির মানসপটে বার বার ভেসে উঠবেন দীর্ঘদেহী মহীরুহ মহান দেশপ্রেমিক বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের প্রতিচ্ছবি। এই প্রতিচ্ছবিকে  সামনে নিয়ে শোকে মুহ্যমান না থেকে, শক্তিতে পরিণত হতে হবে । দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বৈষম্যহীন সোনার বাংলা পরিণত করতে হবে। প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বার বার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীপ্ত উচ্চারণ করেছেন। তার বক্তৃতায় বার বার উঠে এসেছে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীপ্ত শপথ। তাই আসুন, আমরা দৃঢ়ভাবে শপথ নিই, আমরা নিজেরা দুর্নীতিমুক্ত  থেকে দুর্নীতি দমনে আমাদের আইনি দায়িত্ব নির্মোহভাবে পালন করি। তাহলেই জাতির পিতার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, অনেকে আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা প্রথম থেকেই সমালোচনাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মসমালোচনা করে আত্মশুদ্ধির পথে এগোতে চাই। তবে বস্তনিষ্ঠ সমালোচনা হলে আত্মশুদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।

দুদকের প্রশাসন অনুবিভাগের মহাপিরচালক মো. জহির রায়হানের সঞ্চালনায় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ১৫ আগস্ট শহিদদের উদ্দেশে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন দুদক মহাপিরচালক (লিগ্যাল) মো. মফিজুর রহমান ভুঞা। 

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর