১৫ জুন, ২০২১ ১৮:২৫
স্মরণসভায় বক্তারা

‘মোহাম্মদ নাসিমের চলে যাওয়া দেশের রাজনীতির জন্যও ক্ষতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘মোহাম্মদ নাসিমের চলে যাওয়া দেশের রাজনীতির জন্যও ক্ষতি’

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আলোচনা সভা

মোহাম্মদ নাসিম তার বাবা মনসুর আলীর মতোই সাহসী ও নির্ভীক ছিলেন। কোনোদিন অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি, তিনি ছিলেন আপসহীন নেতা। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ডের পর অনেক জেল-জুলুম, নির্যাতন তাকে সহ্য করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে তার অসামান্য অবদান ছিল। তার চলে যাওয়া শুধু দলই নয়, দেশের রাজনীতির জন্যও ক্ষতি।’

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে সংগঠনের সহ-সভাপতি কণ্ঠ শিল্পী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী  ডা. মুরাদ হাসান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, এম এ করিম, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ কমিটির সদস্য সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রনি, যুবলীগ নেতা মানিক লাল ঘোষ, অভিনেত্রী তারিন জাহান, শাহনুর,  সাংবাদিক সুজন হালদার, রোকন উদ্দিন পাঠান প্রমুখ।  

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মোহাম্মদ নাসিম পিতার পুত্র হিসেবে নেতা হননি। ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর সন্তান হিসেবে তিনি নেতা হননি। তিনি কর্মী থেকে নেতা হয়েছেন। ছাত্রলীগ করেছেন, ছাত্র রাজনীতি করেছেন। দলের পক্ষে আদর্শের পক্ষে সংগ্রাম করে তিনি তরুণ বয়সে কারাগারে গেছেন। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ডের পর অনেক জেল-জুলুম, নির্যাতন তাকে সহ্য করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে তার অসামান্য অবদান ছিল। যখন তিনি জাতীয় নেতার আসনে আসীন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তখন তিনি অনুজদের প্রতিও ভালো আচরণ করতেন। তিনি সব নেতাকর্মীকে আপন করে নিতেন। এ গুণ সব নেতার মধ্যে থাকে না। অনুজদের সম্মান করে কথা বলতেন।

তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম অনেক বড় নেতা ছিলেন, তারচেও বড় কথা তিনি তার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সন্তান ছিলেন। কিন্তু তার আচার-আচরণে কেউ বলতে পারবে না এত বড় নেতার ছেলে ছিলেন, বা তিনি এত বড় নেতা, তার আচার আচরণে এটা কখনও ফুটে উঠতো না। সবাইকে আপন করে নেওয়ার অসামান্য গুণ তার মধ্যে ছিল। আমি তারচে বয়সে অনেক ছোট, আমাকেও তিনি আপনি করে বলতেন। কর্মীদের খোঁজ-খবর নেওয়া একজন নেতার গুণ থাকা দরকার, এটা তার মধ্যে ছিল, তিনি সবার খোঁজ-খবর নিতেন। তিনি ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসেবে ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে ১৪ দলকে আওয়ামী লীগের পাশে রাখা অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষের পেশাজীবী সংগঠনে সুসংগঠিত করে আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড় করাতে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি করোনার মধ্যে মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।  

তথ্যমন্ত্রী বলেন, নাসিম ভাইয়ের মতো একজন নেতার চলে যাওয়ায় শুধু আমাদের দলের জন্য নয়, দেশের রাজনীতির জন্যও ক্ষতি হয়েছে।  তার অন্যতম গুণ ছিল অন্য দলের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখা। একেবারে কট্টর বিরোধীদের সঙ্গেও তিনি সুসম্পর্ক রাখতেন।

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, নেতা তৈরির কারিগর ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম, তিনি ছিলেন রাজনৈতিক শিক্ষক। আন্দোলন সংগ্রাম কীভাবে গড়ে তুলতে হয়, তার প্রধান সেনাপতি ছিলেন তিনি। চরম নির্যাতনের মুখেও তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঈমানি করেননি। একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে মন্ত্রণালয়-দুটি ক্ষেত্রেই দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন মোহাম্মদ নাসিম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাসে সোনার হরফে লেখা থাকবে।

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। অসাম্প্রদায়িক সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গীকার থেকে কখনো বিচ্যুত হননি তিনি। সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিমের ভূমিকা রাজনৈতিক কর্মীদের সাহসী ও অনুপ্রাণিত করবে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আন্দোলন সংগ্রামে তিনি কখনো পিছু হটেননি। নিজে পিট পেতে দিয়ে কর্মীদের পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু কর্মীদের গায়ে আচর লাগতে দেননি। সত্যিকারের জননেতা বলতে যে যে গুণ থাকা দরকার মোহাম্মদ নাসিমের মধ্যে সব ছিল। তিনি চাইতেন সবসময় নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে। সে কারণে আওয়ামী লীগের সবোর্চ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য হয়েও কেন্দ্রীয় ১৪ দল এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের একত্রিত করতেন। 

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় একটি ক্ষমতা কেন্দ্রীক বলয় গড়ে উঠেছে। এই বলয়ে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের কাছে আসতে পারেন না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নাসিম ছিলেন ব্যতিক্রম। পুরানো ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতেন।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাবা সবসময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। তার চিন্তা চেতনায় সবসময় ছিল দলীয় নেতাকর্মী। পরিবারের সদস্যদের চেয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দিতেন। সে কারণে সকলের প্রিয় ‘নাসিম ভাই’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর