২৪ জুন, ২০২১ ১৭:৪৫

অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ইউনানী-আয়ুর্বেদিক শিক্ষা আইনে ক্ষুব্ধ

অনলাইন ডেস্ক

অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ইউনানী-আয়ুর্বেদিক শিক্ষা আইনে ক্ষুব্ধ

পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই আমলে না নিয়ে বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২১-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। বিল আকারে মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপিত হবার পর এতে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ এ খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

তাদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ড এবং তৃতীয় অধ্যায়ে বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। একই আইনের অধীনে এই দুটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিধান থাকা বিদ্যমান আইনি রীতির সঙ্গে মারাত্মকভাবে সাংঘর্ষিক।

২৭ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের উপ-সচিব রাজীব হাসান বলেন, একই আইনের অধীনে দুটি আইনগত সত্ত্বা প্রতিষ্ঠিত হবার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে নেই। তার আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, একই আইনে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ড এবং বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা সাংঘর্ষিক কি না, এবিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের মতামত নিতে হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মতামত গ্রহণ না করে একতরফাভাবে বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২১-এর খসড়া চূড়ান্ত করে। পরবর্তীতে এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দ্বিতীয়বারের মতো বিল আকারে উত্থাপন করা হয়।

বিদ্যমান অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ইউনানী-আয়ুর্বেদিক খাতের অভিভাবক সংস্থা বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ডের কোনো মতামত গ্রহণ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ধৃষ্টতা ও সীমালঙ্ঘনের পরিচয় দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্তাব্যক্তি। এর মধ্যদিয়ে প্রত্যক্ষভাবে আইন লঙ্ঘনের অপরাধে দায়ী করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবকে।

প্রস্তাবিত আইনে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ড এবং বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কাউন্সিলের কার্যাবলী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মারাত্মক বিরোধের বিধান সংযোজন করা হয়েছে। ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ডকে ডিপ্লোমা ইউনানী আয়ুর্বেদিক কলেজের স্বীকৃতি এবং নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের একাডেমিক মান নিয়ন্ত্রণ, তদারকি, পরিদর্শন, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ন্যস্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কাউন্সিলের ওপর। ফলে দুটি সংস্থাকে ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব ও সাংঘর্ষিক অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। 

বর্তমানে বিল আকারে প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া তৈরির সময়েই নিয়মবহির্ভূত পন্থা অবলম্বন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য সচিব আলী নূরের সভাপতিত্বে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২০-এর খসড়ায় উল্লিখিত বোর্ড এবং কাউন্সিলের গঠন ও কার্যক্রমের জন্য পৃথক আইনের খসড়া প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা আলোর মুখ দেখেনি।

প্রস্তাবিত আইনের আগের খসড়ার ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে ইউনানী-আয়ুর্বেদিক খাতের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া ছিল। কিন্তু নতুন প্রস্তাবিত খসড়ায় পুরো ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত নির্দেশনা বাদ দেওয়ায় ইউনানী-আয়ুর্বেদিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ রুদ্ধ ও পঙ্গু হতে যাচ্ছে। এতে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করে বাংলাদেশ দেশীয় চিকিৎসক সমিতি, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইউনানী মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইন পাস হলে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য খাত নিয়ে স্বপ্ন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা ধুলিস্যাৎ হবে।

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর