সখিপুরের চরভাগা পেদাকান্দি গ্রামের অসহায় রাস্তন মিয়া গাজীর ৫ সদস্যের একমাত্র আয়ের সম্বল ছিল অটোবাইক। সেটা গত পরশু রাতের আধারে চুরি হয়। ঋণ ও ধারের টাকায় কেনা এই অটোরিকশা নিয়ে তার ছেলে আফজল গাজী ফেসবুকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে আবেগঘন একটা স্ট্যাটাস দেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম হতদরিদ্র অটোচালককে একটা অটোবাইক ক্রয় এবং তার তিন সন্তানের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন।
গতকাল ফেসবুকে আফজল গাজী লেখেন, 'আমার বাবা, অটোরিকশা (ইজিবাইক) চালিয়েই আমাদের সংসারের ঘানিটা সামনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই সম্বলটাও নিজেদের বাড়ির সামনে থেকে কারা যেন নিজে গেছে। এভাবেই জরাজীর্ণ জীবন। আর এ-ই অটোরিকশা টাও ঋণের। কিছুদিন আগে নতুন ব্যাটারি টাও ধারের টাকায় কেনা। এখন পথে নামা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। বশির মাস্টার কাকার বাড়ির পাশে রেখে প্রতিদিনের ন্যায় আজকে বাসায় গেছে কিন্তু আবার এসে দেখে গাড়িটা নাই। কি করব দিশেহারা।' এরপর আবার লেখেন, 'একটা গাড়ি একটা স্বপ্ন। গাড়ির চাকাটা থেমে গেছে এবার মনে হয় স্বপ্নটাও থেমে যাবে!'
বিষয়টি পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের দৃষ্টিতে আসে। ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। বাবাকে অটোবাইক কিনে দেওয়াসহ তিন ভাই-বোনকে পড়ালেখার দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর থানার পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করতে নিদের্শনা দেন।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফেসবুকে আফজল গাজী আবার লেখেন, 'ধন্যবাদ এ কে এম এনামুল হক শামীম ভাই, মাননীয় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী, এমপি শরীয়তপুর-২। আমার বাবার অটোরিকশা (ইজিবাইক) গতকাল চুরি হয়ে যাওয়ায় আমি আমার ফেসবুকে একটা চুরির ঘটনা নিয়ে কয়েকটা হৃদয়বিদারক পোস্ট দেই। আমি ও আমার পরিবারের সবাই ভেঙে পড়ি। এ-ই ঘটনা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নজরে এলে তিনি নিজে থেকে আমাকে একাধিকবার ফোন দেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। ফোন দিয়ে বিস্তারিত ঘটনা জানেন। তিনি সখিপুর থানার ওসিকে বলে একজন পুলিশের উপ-পরিদর্শক তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের বাসায় পাঠান।'
'ওসি একজন পুলিশের উপ-পরিদর্শক পাঠিয়ে আমাদের বাসা থেকে গাড়ির বিস্তারিত তথ্য, চুরির কিভাবে, কখন, কোথা থেকে তার বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করে নিয়ে যান। মন্ত্রী মহোদয় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সকলকে (আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ) সবাইকে ব্যাপারটার সমাধানের তাৎক্ষণিক তাগাদা দেন। খোঁজে বের করতে বলেন। তারপর মন্ত্রী মহোদয় আবার ফোন দিয়ে আমাকে জানান, চোর ধরবোই, গাড়ি খুঁজে বের করবোই। আর তোমার পরিবারের পাশে আমি আছি। আর তোমার বাবাকে একটা নতুন গাড়ির ব্যবস্থা করে দেব। তারপর আরও তিনি জানান যে, আমরা তিন ভাই-বোন পড়াশুনা করি তাই তিনি আমাদের পড়াশুনার জন্য সহায়তা করবে বলেও কথা দেন। এমন এমপি-মন্ত্রী সর্বত্র বাংলায় হোক তাহলে তো সোনার বাংলা হবে। যারা আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সবারই খোঁজখবর রাখেন। ধন্য এমন জনপ্রতিনিধি পেয়ে।'
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত