সারাদিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা এবং উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ৫১তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২২ উদযাপন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দিনের শুরুতেই ফজরের নামাজের পর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের রুহের মাগফিরাত এবং দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন কামনা করে পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবির সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়
এরপর বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ, এসপিপি, এনএসডব্লিউসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি। একই সময়ে বিজিবির অন্যান্য সকল ইউনিটে জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয়।
সকাল ছয়টা ৪৫ মিনিটে বিজিবি মহাপরিচালক পিলখানাস্থ স্মৃতিসৌধ ‘সীমান্ত গৌরব'-এর বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় বিজিবির একটি সুসজ্জিত চৌকস দল ‘গার্ড অব অনার' প্রদান করেন। এর পাশাপাশি রাঙামাটির নানিয়ারচরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ এবং যশোরের শার্শা উপজেলার কাশীপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এর সমাধিস্থলে সংশ্লিষ্ট রিজিয়ন কর্তৃক বিজিবি মহাপরিচালকের পক্ষ হতে গার্ড অব অনার এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল বিজিবি সদস্যদের মাঝে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন, ‘বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ এবং স্বাধীনতা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা, বিজিবির সকল ইউনিটে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পিলখানায় বিজিবি যাদুঘর সকলের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়। বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় বিজিবির বাদকদল কর্তৃক বাদ্য পরিবেশন করা হয়। সন্ধ্যার পর পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবির সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল, বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ও আখাউড়া-আগরতলা আইসিপিসমূহে বিজিবি-বিএসএফ কর্তৃক জমকালো যৌথ ‘রিট্রিট সিরিমনি' প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ মার্চ) গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জঘন্যতম নারকীয় গণহত্যাকাণ্ডে নিহত সকল শহীদের স্মরণে ও তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে জুম্মার নামাজের পর বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয় এবং রাত ৯টায় এক মিনিটের প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট' কর্মসূচী পালন করা হয় বিজিবি সদর দপ্তরসহ সকল রিজিয়ন, সেক্টর এবং ইউনিটে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে তৎকালীন ইপিআর (বর্তমানে বিজিবি) সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন বিজিবির প্রতিটি বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। ছিনিয়ে এনেছিল লাল-সবুজের পতাকা খচিত স্বাধীন বাংলাদেশ। এখন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এই যুদ্ধে বিজিবি'র প্রতিটি সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে জাতির পিতার কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা গড়তে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। মহান স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে এই চেতনায় নতুন করে শপথ নিল বিজিবি'র প্রতিটি সদস্য।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক