বগুড়া সদরে কৃষি পণ্যের কীটনাশক বিক্রেতা নাজমা বেগমের ছেলে মো. নাদিম। রংপুরের পলাশবাড়ির ছাপাখানার দিনমজুর শামসুল সরকারের ছেলে মো. শিমুল সরকার। রাজশাহীর মোহনপুরে কুমার চন্দুর পাল ও মালতি রানীর ছেলে মিলন পাল। এরা সবাই বাংলাদেশ পুলিশে ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই-নিরস্ত্র) পদে প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
দারিদ্রতা ওদের দমাতে পারেনি। ২০২০ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ৯২১ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে তারা পুলিশের ৪০তম এসআই ব্যাচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এসআই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ মেধা ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়েছে। পরীক্ষায় অনিয়ম করার কোন সুযোগ ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীরা আগামী ১৭ থেকে ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নিবেন। নির্বাচিতদের মধ্যে ৮৫৪ জন ছেলে এবং ৬৭ জন মেয়ে রয়েছে। এর আগে এসআই পদে প্রাথমিকভাবে আবেদনকৃত ৬২ হাজার ৩৪৩ জনের মধ্যে প্রযুক্তি, মেধা ও বুদ্ধিভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। একাধিক ধাপ অতিক্রম করে উত্তীর্ণ হয় ১৮ হাজার ৮০৪ জন। এদের মধ্যে লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৫ হাজার ৮৩৯ জন। এরপর কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষা শেষে ৫ হাজার ৩১ জনকে বেঁচে নেওয়া হয়। সর্বশেষ লিখিত এবং বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষার মেধাক্রমের ভিত্তিতে ৯২১ জনকে প্রাথমিকভাবে এসআই পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।
সুপারিশকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যবিত্ত, কৃষক পরিবার এবং স্বল্প আয়ের পরিবারের সদস্য। এদের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭২ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৮ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ জনসহ ৯২১ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিষয়ের ভিত্তিতে অ্যাকাউন্টিংয়ের ৯৫ জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৫৪ জন, অর্থনীতির ৫১ জনসহ ৯২১ জন রয়েছেন। লিথো কোডেড উত্তরপত্রের মাধ্যমে লিখিত ও কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষায় এরা উত্তীর্ণ হয়েছে। শিগগিরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ করে তাদেরকে মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য রাজশাহীর সারদায় পাঠানো হবে। ২০২১ ও ২০২৩ সালের নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ সদর দফতর।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের নিয়োগে ঘুষ নেয়া, অথবা রাজনৈতিক সুপারিশে নিয়োগ দেয়ার দুর্নাম ও অভিযোগ ছিল অতীতে। সেই অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসতে এবার নিয়োগ পরীক্ষা কয়েকটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। সুপারিশ বা অর্থের জোরে নয় বরং মেধা, তাৎক্ষণিক বুদ্ধি, শারীরিক দক্ষতা, প্রযুক্তিজ্ঞানে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে হতদরিদ্র, রিকশাচালক, দিনমজুর এসব পরিবারের সন্তানদের মধ্যেই বেশি প্রার্থী চূড়ান্তভাবে টিকে গেছে।
খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা ব্যতিত বাকি ৬২ জেলার শিক্ষার্থীরা এসআই হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। এদের মধ্যে গোপালগঞ্জের ৫৬, ঢাকার ৩৮, চট্টগ্রামের ৩৮, নরসিংদীর ৩০, চাঁদপুরের ১৮, সুনামগঞ্জের ১৫ জন উল্লেখযোগ্য।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত