সিসা দূষণ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সেই সঙ্গে ২০৪০ সালের মধ্যে সিসা দুষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিআইসিসিতে অনুষ্ঠিত ‘সিসামুক্ত বাংলাদেশ : আমরা কীভাবে পৌঁছাব?’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যাশার কথা জানান।
আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফের উদ্যোগে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো— ভারি ধাতু দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব, বিশেষত শিশুদের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এছাড়া, এবং এই সংকট মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের একত্রিত করা।
এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা সিসা এবং ভারি ধাতু দূষণকে ‘নীরব সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সরকার অংশীজনদের সহযোগিতায় ২০৪০ সালের মধ্যে সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে।
সিসা দূষণের উৎস শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপরও উপদেষ্টা গুরুত্বারোপ করেন।
পরিসংখ্যানের গুরুত্ব উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সীসা দূষণের জাতীয় পর্যায়ের তথ্যগুলো কার্যকর নীতিমালা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি ইউনিসেফ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহযোগিতার প্রশংসা করেন। পাশাপাশি দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত ও তথ্যভিত্তিক উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।
কর্মশালায় উপস্থাপিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের শিশুদের রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রায় সিসা রয়েছে। বায়ু, পানি, মাটি, খাদ্য, রং ও রান্নার পাত্রের মতো সামগ্রী থেকে হতে পারে এটি রক্তে প্রবেশ করতে পারে। দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে ভারি ধাতুর দূষণ বেড়েছে, যা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
সম্প্রতি ইউনিসেফের সহযোগিতায় আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত এক গবেষণায় ঢাকা, খুলনা ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় শিশুদের রক্তে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই সংকটকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ইউনিসেফ ও ইউএসএআইডির সহযোগিতায় আসন্ন এমআইসিএস ২০২৪-২০২৫ জরিপে রক্তের সিসার মাত্রাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নীতি প্রণয়নে সহায়ক তথ্য প্রদান করবে।
ইউনিসেফ একটি শক্তিশালী বহু-খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার আহ্বান জানিয়ে গবেষণাগারে ভারি ধাতুর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছে। ইউনিসেফসহ বিভিন্ন অংশীদারদের সহায়তায় ‘সীসামুক্ত ভবিষ্যৎ’ উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে শিশুদের এর দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
এ সময় বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স, ইউএসএআইডির মিশন পরিচালক রিড আইশ্লিম্যান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম।
বিডি প্রতিদিন/ইই