বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না। কোনো হত্যাকাণ্ডই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া হয়নি। আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমত পোষণকারীদের নির্মমভাবে দমন করা হতো। তারা গুম, হত্যা, টর্চার সেল ও আয়নাঘরের মতো নির্যাতন কেন্দ্র করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ’৭৫ এর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিলে ’২৪ এ এসে আওয়ামী লীগের এই করুণ পরিণতি হতো না।
তিনি আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধাপে ধাপে দূষিত হয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ বিচার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে দলীয় বিবেচনায় বিচারকদের নিয়োগ দিয়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশন ও সুপ্রিমকোর্ট থেকে যে সব রাজনৈতিক মামলার রায় হয়েছে সে সব রায়ের প্রতি মানুষের আস্থা ছিল না। ফলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যায়। শেখ মুজিবের সাথে ইয়াহিয়া খানের টেলিফোনে যোগাযোগ ছিল। তাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য তাজউদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বার বার বললেও তিনি বাসা ছেড়ে কোথাও যেতে সম্মত হননি। শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধে যাননি। আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবকে ইতিহাসের নায়ক করতে গিয়ে অনেক জাতীয় নেতার অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কারণে ’৭৪ এর দুর্ভিক্ষ হয়েছে। সে সময় প্রতিদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনেক ক্ষুধার্ত মানুষকে মারা যেতে দেখা গেছে।
শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র অয়োজনে জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরাজয় নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলেও রেখে গেছে হত্যাযজ্ঞের নির্মম চিহ্ন। রক্তে আঁকা এই ইতিহাস দেশের সবচেয়ে বড় কালো দাগ। এই গণহত্যার দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না। জুলাই বিপ্লবে শহীদরা জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবার পরিজনসহ বেশিরভাগ নেতাকর্মী গণহত্যা চালিয়ে পালিয়ে যাবার পর ছন্নছাড়া হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ নামক দলটির। হতবাক ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ সামাজিক, রাজনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ কমিটিতে আওয়ামী পন্থী আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে অনেকেই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন আবার কেউ কেউ পালিয়েছেন।
কিরণ আরও বলেন, শেখ হাসিনার নির্মম পরিণামের পরে তার পাশে দলের কেউ দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছে না। যারা নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আর্থিক খাতসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে তারা ইতোমধ্যে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। খলনায়ক হিসেবে বিচারের মাধ্যমে কারাগারে যাচ্ছে। আর জুলাই বিপ্লবের শহীদরা ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে সারা জীবন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবে। শপথ ভঙ্গ করে বিগত তিনটি নির্বাচনে যেসব নির্বাচন কমিশনার নানা কায়দায় ভোট জালিয়াতি করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী নির্বাচনি অপরাধে জড়িত ছিলেন সে সকল ডিসি, এসপি, রিটার্নিং অফিসারসহ অভিযুক্ত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নয়, দল হিসেবেও আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চায়। এখানে প্রতিশোধের কথা কেউ বলছে না। বিচারের কথা বলছে। অপরাধীকে বিচার না করে ছাড় দিয়ে সহনশীল রাজনীতি হয় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতাসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কারণ নানা দেশি-বিদেশি চক্র এই বিপ্লবের অর্জনকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রকারী এই অর্জনকে নস্যাৎ করতে পারবে না। তবে সরকার, রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের মধ্যে দূরত্ব বাড়লে দেশের জন্য মঙ্গল হবে না। দেশ ও জাতির স্বার্থে সকল পক্ষ ঐক্যবদ্ধ থাকবেন বলে জনগণের প্রত্যাশা।
‘জুলাই হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরাজয়ের চেয়ে সামাজিক পরাজয় বেশী হয়েছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কে এম মাহমুদ হাসান, সাংবাদিক জাহানারা পারভিন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত