সকাল থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। ৯টি অঞ্চলে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, সুন্দরবন থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে থাকা এই নিম্নচাপের কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টা সারাদেশের সব বিভাবেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এছাড়া, এই নিম্নচাপটি আরও শক্তিমাত্রা অর্জন করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটির ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মল্লিক।
তবে নিম্নচাপের কারণে যেহেতু সারাদেশে এখন বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে, তাই দেশের সব সমুদ্র ও নদী বন্দরকে সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া ভালো না হওয়া পর্যন্ত বা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া
গত ২৭শে মে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছিলো। পরদিন তা সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয় এবং আজ সকাল ৯টার দিকে তা নিম্নচাপে রূপ নেয়। এই লঘুচাপের ফলে সারা দেশের আট বিভাগেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং এসব অঞ্চলের কোথাও কোথাও আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া, ঢাকাসহ দেশের ৯টি অঞ্চলে আজ সন্ধ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে। এদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এদিকে, সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া ও বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হওয়ার কারণ
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক আগেই জানান, "সাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরেকটু শক্তিমাত্রা অর্জন করতে পারে। কিন্তু এটির ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।"
কারণ এই নিম্নচাপটি এখন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে উপকূলের একদম কাছাকাছি রয়েছে।
এর শক্তি বেড়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মাঝে রয়েছে, বঙ্গোপসাগরে অনেকক্ষণ স্থায়ী হওয়া। এ বিষয়ে মি. মল্লিক বলেন, "ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিমাত্রা অর্জনের জন্য যে জ্বালানি প্রয়োজন, তা হলো জলীয় বাষ্প।"
"দীর্ঘক্ষণ ধরে জলীয় বাষ্প যেহেতু ভূমি ও সমুদ্রের ইন্টারেকশনের (মিথস্ক্রিয়া) মাঝে আছে, তাই সে শক্তিমাত্রা অর্জন করতে পারবে না," বলছিলেন এই আবহাওয়াবিদ।
অর্থাৎ, নিম্নচাপ যখন দীর্ঘ সময় ধরে ভূমি ও সমুদ্রের মাঝে অবস্থান করে, তাহলে তা সাগর থেকে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প পায় না। ফলে ঘনীভবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা পূর্ণ শক্তি অর্জন করতে পারে না এবং তখন তার ঝড়ে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
এছাড়া, বর্তমানে ঊর্ধ্ব আকাশে বায়ুর গতিবেগ ও ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বাতাসের গতিবেগের পার্থক্য অনেক বেশি আছে। এই পার্থক্য যখন কম থাকে, তখন নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। পাশাপাশি ঘূর্ণনের মাত্রা'র মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে না বলে জানান মি. মল্লিক।
তিনি এদিন দুপুর একটার দিকে আরও জানান, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি সুন্দরবন থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে, যা উপকূল থেকে খুবই কাছাকাছি।
তার ভাষ্যে, "সুতরাং, ঊর্ধ্ব আকাশ ও নিম্ন স্তরের বাতাসের গতিবেগের পার্থক্য বেশি থাকা, ভর্টিসিটির (ঘূর্ণন) মান না বাড়া ও উপকূলের কাছাকাছি এই সিস্টেম তৈরি হওয়ার কারণে এটির ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশেই কম।"
"আমরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত যে এটির ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি এখন ক্রমশ বৃষ্টিপাত ঝরাচ্ছে এবং বৃষ্টিপাত ঝরিয়ে এটি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়বে।"
তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এটি হতো এই মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড় এবং নাম হতো 'শক্তি'।
কোন দিক দিয়ে অতিক্রম করবে নিম্নচাপ
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, এই নিম্নচাপটি আজ সারাদিনে "আরও একটু শক্তিমাত্রা অর্জন করবে। এরপর এটির গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।"
কিন্তু গভীর নিম্নচাপ থেকে এটির ঘূর্ণিঝড়ে আর রূপ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও উপকূল অতিক্রম করতে আরও বেশ সময় লাগবে নিম্নচাপটির। কতক্ষণ লাগবে? এর কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর না দিলেও মি. মল্লিক বলেছেন, "১২ থেকে ১৮ ঘণ্টার মাঝে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের কাছাকাছি চলে আসবে এটি।"
এবং, এটি ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।
তাই, এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর দিয়ে স্বভাবতই ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাবে।
এ কারণে দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরকে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এছাড়া, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায়, বিশেষ করে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে, ভূমিধস এবং ভারী চট্টগ্রাম মহানগরের কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে।
এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকেও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত