বুধবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অরক্ষিত বরগুনার টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

হাসানুর রহমান ঝন্টু, বরগুনা

দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবনখ্যাত বরগুনার তালতলি উপজেলার টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। বন বিভাগের নজরদারি আর অবহেলায় অভয়ারণ্যটি বেহাল।

বেষ্টনী না থাকায় হরিণগুলো কোথায় গেছে কেউ বলতে পারেন না। তালতলি সদর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণের অভয়ারণ্যটি একসময় পর্যটকের ভিড়ে জমজমাট থাকত। এখন হাতেগোনা কয়েকজন পর্যটক এলেও অতৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভয়ারণ্যটি রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না নেওয়ায় বন বিভাগ চাহিদামতো জনবল পাচ্ছে না। ৪০৪৮.৫৮ হেক্টর জমিজুড়ে গড়ে ওঠা প্রকৃতির দৃষ্টিনন্দন সবুজ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে এটিকে টেংরাগিরি নামকরণ করা হয়। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর টেংরাগিরি বনাঞ্চলকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলেও দৃশ্যমান প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা অভয়ারণ্যের উন্নয়নে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে ১১ বছর ধরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের দক্ষিণে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সৈকতের তটরেখা। যেখানে ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্যটকরা গা ভাসিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন। দেখা মেলে লাল কাকড়ার ছোটাছুটি। অভয়ারণ্যের পুবে কুয়াঘাটা; পশ্চিমে সুন্দরবন, হরিণবাড়িয়া আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এ বনে রয়েছে শ্বাসমূলীয় গাছ কেওড়া, হেতাল, গেওয়া, ওড়া, পশুর, বাইন, সিংড়া ও কাকড়া। যা প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠেছে। বনবিভাগ থেকে সৃজন করা হয়েছে সুন্দরী গাছ। টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি অনেকের কাছে ইকোপার্ক নামে পরিচিত। এখানে এক সময় অনেক হরিণ ছিল।

বর্তমানে বেষ্টনীতে মাত্র চারটি হরিণ রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেষ্টনীর দেওয়াল ভেঙে যাওয়ায় অধিকাংশ হরিণ বাইরে চলে গেছে। তবে বনের ভিতরেই বিচরণ করছে বলে দাবি করেন তালতলি উপজেলার বন বিভাগের রেঞ্জার মনিরুল ইসলাল। তিনি বলেন, টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নিয়ে বন মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বনকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি রয়েছে। যারা সব বিষয়ে বন বিভাগকে সহায়তা করে আসছে। এখানে হরিণ ছাড়াও রয়েছে শূকর, বানর ও কুমির।  

টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে আসা দর্শনার্থী মহিউদ্দিন অপু বলেন, বনটি গর্ব করার মতো, অথচ ট্রলারে এসে চোরেরা বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। দর্শনার্থী ও পর্যটকরা বলেন, বনের ভিতরে পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার নেই। অপরিচ্ছন্ন-নোংরা পরিত্যক্ত বাথরুম ব্যবহারযোগ্য নয়। আকলিমা নামের এক গৃহবধূ বলেন, বনের ভিতরে বন বিভাগের গাইড নেই। এ ছাড়া বনভোজনে আসা অনেকেই রান্নার জন্য বনের গাছের শুকনা ডাল ভেঙে ব্যবহার করছেন। তদারকির তেমন কেউ নেই।

বিট কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল সংকট রয়েছে। তারপরও যে জনবল রয়েছে তাদের দিয়েই বনের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি। তিনি বলেন, এক সময় গাছ কেটে নেওয়া হতো। এখন টহল বাড়িয়ে দেওয়ায় গাছ চুরি হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর