শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ

দুই পদে লড়ছেন এক ডজনের বেশি নেতা

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

দীর্ঘ সাত বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবাষির্ক সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে মুখোমুখি অবস্থানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত জেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। উত্তেজনার সম্মেলনে শীর্ষ দুই পদের জন্য লড়ছেন এক ডজনের বেশি নেতা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নানামুখী তৎপরতাসহ লবিং তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। পদ ভাগাতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কেউ কেউ ধরনা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের আশীর্বাদ ও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে নানা ধরনের কৌশল করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক নেতা। এদিকে সম্মেলন সফল করতে জেলা স্টেডিয়ামসহ পুরো শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর অংশে ১৬৩টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, টানা সাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালে জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের সবকটিতে জয়লাভের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থানের জানান দেয় দলটি। সম্প্রতি দলের মধ্যকার দুটি পক্ষের ব্যক্তিগত আক্রোশ, পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ, আলাদা দলীয় কর্মসূচি পালনসহ নানাবিধ কারণে জেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ্যে। এর প্রভাব তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে পড়েছে। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নরসিংদীর রাজনীতি। বিবদমান দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ করে চলেছে। শুধু তাই নয়, ফেসবুকেও এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিপক্ষে ছড়াচ্ছেন কুৎসা। দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগের এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (বীরপ্রতীক)। অন্যদিকে রয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দখলে মরিয়া বিবদমান দুটি পক্ষ।

অন্যদিকে নরসিংদীর ৬টি উপজেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে জেলার শীর্ষ পদে কে আসছেন তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের চলে আসা অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বন্দ্বের অবসান হবে, নাকি তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে এ নিয়েও চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্মেলনের দিনে ঘোষিত কমিটি যে পক্ষের বিপরীতে যাবে সে পক্ষই সংঘর্ষে জড়াবে বলে ধারণা করেছে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল। তবে পরিচ্ছন্ন ও যোগ্য নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে দলের চলমান সংকট নিরসন চান দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।  এদিকে শীর্ষ দুই পদের জন্য লড়ছেন এক ডজন নেতা। সভাপতি পদে চলছে বর্তমান ও সাবেকের লড়াই। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব চাচ্ছেন ভারমুক্ত হতে। আর সাবেক সভাপতি সদরের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু চাচ্ছেন পুরনো পদ ফিরে ফেতে। সভাপতি পদে আরও লড়ছেন নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন, নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খাঁন পোটন ও নরসিংদী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান পিয়ার। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী, নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সাবেক সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূইয়া, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূইয়া, শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভূইয়া, নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল ইসলাম। নবীন ও প্রবীণের এই লড়াইয়ে প্রত্যেকেই দলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তারা। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এমপি। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সম্মেলন সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এক মঞ্চে নিয়ে আসার জন্য।

 

সর্বশেষ খবর