১৯ মে, ২০২০ ০৮:৪৬

জাতীয় ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চায় 'দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চ'

এফ এম শাহীন

জাতীয় ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চায় 'দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চ'

এফ এম শাহীন

দুর্নীতি বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে একটি বড় ব্যাধি। এটি দেশের সার্বিক অগ্রগতি এবং উন্নয়ন ব্যাহত করে চলছে যুগের পর যুগ। দুর্নীতি দমন কোন সরকারের পক্ষে এককভাবে দমন করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরে মূল্যবোধ সৃষ্টি এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে আমাদের। আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি, রোগের চিকিৎসার চেয়ে যদি রোগ প্রতিরোধ করা যায়, তাহলে বেশি কাজে দেয়। আমরা যদি আমাদের শুভবুদ্ধি, মূল্যবোধ, দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারি, তাহলেই দুর্নীতি নামক জাতীয় ব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। 

গতবছর একটি অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি জিরো টলারেন্সে নেয়া সম্ভব হলে প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশে পৌঁছে যাবে। যা বঙ্গবন্ধু তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণে তুলে ধরেছিলেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে সমস্যা স্বীকার করে তার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

স্বাধীনতার পর দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার সংগ্রামের পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন সংগ্রামের ডাক দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কতটা সোচ্চার ছিলেন তা আলোচনায় এসেছে সামান্যই। বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলো লক্ষ করলে দেখা যায়, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণ বয়স থেকে শুরু করে জীবনের শেষ পর্যন্ত সোচ্চার ছিলেন তিনি। তিনি দুর্নীতিকে দেশের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। দুর্নীতি নির্মূল ও দুর্নীতিবাজাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। 

রাষ্ট্র জনগণকে যেসব সেবা দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে জরুরি একটি খাত হলো স্বাস্থ্যসেবা খাত। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। অথচ অতি জরুরি এ খাতে অনিয়মের যেন অন্ত নেই। দুর্নীতি একে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। শুধু সরকারি চিকিৎসাসেবাই নয়, গোটা স্বাস্থ্য খাতেই দেখা যায় এমন অরাজকতার চিত্র।

দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে দিনরাত এক করে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তখন নতুন ষড়যন্ত্র আর উন্মাদনায় বারবার মেতে ওঠে কিছু মুখোশধারী ক্ষমতা লোভিরা। দুর্নীতির সাথে রয়েছে নানা গণবিচ্ছিন্ন কর্মসূচি ও অবৈজ্ঞানিক আচরণ এবং দাম্ভিকতার সাথে কথা বলে সকল অর্জনকে ম্লান করে দিতে চায় তারা। ব্যাংক লুটপাটকারী ও অর্থপাচারকারীরা নানা অজুহাতে দেশ ও মানুষকে জিম্মি করতে মরিয়া উঠেছে! মহামারী করোনা কালেও তারা লুটপাটে ভীষণ সক্রিয়। সাধারণ জনগণের জীবন - মৃত্যু যেন শুধু সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতিবাজ আমলা, নেতা, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও ব্যবসায়ীদের এক মহা সিন্ডিকেটের যেন রাম রাজত্ব চলছে। যুদ্ধে জয়ী আর রক্তে কেনা রাষ্ট্রটি যেন দুর্নীতিবাজের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে! 

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুশিয়ারি আমাদের আশার আলো দেখায়। সম্প্রতি সময়ে তিনি বলেন  ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করার সময় আমরা মাঝেমধ্যে দেখি যে উইপোকা খেয়ে ফেলে। এখন এই উইপোকাগুলো ধরা এবং তাদের বিনাশ করা এবং জনগণের কষ্টার্জিত টাকা যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়, তার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’ দুর্নীতি ও দুঃশাসনে নিজের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং এই অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব। সে যে-ই হোক না কেন, এখানে দল-মত-আত্মীয়-পরিবার বলে কিছু নেই। যাঁরা এসবে সম্পৃক্ত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লুটেরা - দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একটি বিরতিহীন অভিযান দেশবাসি দেখতে চায় দ্রুত সময়ের মধ্যে। আমাদের বিশ্বাস দুর্নীতিবাজ যত শক্তিশালী হোক না কেন রেহাই নেই। সেই সাথে মহামারীরকালে মাস্ক ও পিপিই কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্ত সকলের শাস্তি নিশ্চিত দেখতে চায় সাধারণ জনতা।
 
সম্প্রতি একটি বক্তৃতা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন," আপনারা মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন। এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, আমি আপনাদের পাশে আছি।" যদিও অন্য জনপ্রতিনিধি এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরবতায় সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে নিত্যনতুন তত্ত্ব প্রদানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চ আজ ঘোষণা করছে, কোন আদর্শহীন দুর্নীতিবাজ, উন্মাদ অর্থ লোভি মানুষের কাছে ত্রিশ লাখ শহিদের বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না। আর যত বড় বাঁধাই আসুক না কেন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের এই লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। যদিও এই লড়াই ভীষণ কঠিন ও জটিল। তবুও নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল জাতি গঠনে এই লড়াইয়ের বিকল্প নেই। দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চের সকল সদস্যসহ দেশপ্রেমিক জনগণ আপনার সাথে আছে। 

আমাদের কি দুর্ভাগ্য যারা দুর্নীতি-অনিয়ম ও দুঃশাসন দূর করবেন, তারা যদি নিজেরাই এসবে জড়িত হয়ে পড়েন তাহলে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, ভোজাল, দুর্নীতি দূর করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যাদের এসব দূর করার কথা, তাদের মধ্যে তেমন পেশাদারিত্ব লক্ষ করা যায় না। সরকারি নির্দেশই পালন না করে বরং তারা নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির চক্রে জড়িয়ে পড়েন। এইসব অসাধু কর্মকর্তারা রাষ্ট্রকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে ফেলেন নিজেদের কলঙ্ক মোচনের জন্য। মনে পড়ছে—১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ প্রথম পুলিশ সপ্তাহ ও বার্ষিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণের কথাগুলো। সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সমস্ত সরকারি কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে, তাদের সেবা করুন। যাদের জন্য যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি, তাদের যাতে কষ্ট না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে, আপনারা অবশ্যই তাদের কঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান, একটা নিরপরাধ লোকের ওপরও যেন অত্যাচার না হয়। তাতে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে। আপনারা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। আপনারা যদি অত্যাচার করেন, শেষ পর্যন্ত আমাকেও আল্লাহর কাছে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, আমি আপনাদের জাতির পিতা, আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনাদের নেতা। আমারও সেখানে দায়িত্ব রয়েছে।’

আমরা দুশো বছর ব্রিটিশদের অধীনে ছিলাম। আমরা ২৪ বছর পাকিস্তানিদের অধীনে ছিলাম। নয়মাস মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, স্বাধীনতার প্রকৃত প্রাপ্তি এনে দিয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। জাতির পিতার খুনিদের শাস্তি, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী মানবতাবিরোধি কুখ্যাত রাজাকার, আল শামস, আল বদরদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করাও অন্যতম অর্জন। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ৩০ লক্ষ জীবন উৎস্বর্গ করেছি, চার লক্ষ মা বোনের নির্যাতনের আত্মচিৎকার আজো ভেসে বেড়ায় আকাশে বাতাসে। আজ বাঙালি স্বাধীন। তবে এখন ব্রিটিশরা নেই, পাকিস্তানিরা নেই, জমিদাররা নেই। কিন্তু শোষণহীন রাষ্ট্র, বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। 

মনে পড়ে এক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তলাবিহীন রাষ্ট্রীয় গ্লানি মোচন করে দুর্বিনীত গতিতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। রোহিঙ্গাদের দুর্দিনে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আজ বিশ্বদরবারে মানবতাবাদী রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন করেছি। আমাদের বাংলা ভাষা ও কৃষ্টিতে আজ বিশ্বকে মুগ্ধ করে বাংলা ভাষা বিশ্বের মধুরতম ভাষা বলেও স্বীকৃত হয়েছে। আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে বিশ্বে সুনাম অর্জন করে চলেছি। কিন্তু সবকিছু থামিয়ে দিতে চায় দুর্নীতি, লুটপাট, মাদক, ধর্মীয় উগ্রবাদ, অনিয়ম আর বিচারহিনতার সংস্কৃতি।


আজ পাকিস্তানের ২২ পরিবার না থাকলেও কয়েকজন মানুষের হাতে দেশের অধিকাংশ সম্পদ। জাতির পিতার বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র চিন্তা আজ ভূলুণ্ঠিত। তাদের কয়েকজনের হাতে দেশের নাটাই। চার দশক আগে বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছিলেন, পাকিস্তান সব লুট করে নিয়ে রেখে গেছে এক চোরের খনি। চার দশক পরে তাঁর কন্যা যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় তখন বলতে বাধ্য হয় ,'আমাকে বাদে সবাইকে কেনা যায়'।

বর্তমানের মন্ত্রী পরিষদ ও আওয়ামী লীগের চেহারা দেখলে মনে হতে পারে, এরা সবাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পছন্দের হতে পারে না। এক অদৃশ্য অপশক্তির ইশারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাঁর সাহসী মাদকবিরোধী, ক্যাসিনো বিরোধী, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান হঠাৎ কেন থেমে যায় সে প্রশ্ন এই প্রজন্মের অনেকের। পাপিয়া কান্ডের ধামাকা ভিন্ন ইস্যুতে চাপা পড়ে নতুন করে রাজ্য চালায় যৌন রাণী ও তাদের খদ্দেরগণ। ব্যাংক, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতারা ক্ষমতার চেয়ারে বসে হুঙ্কার দেয়। তারা দেশের সম্পদ পাচার করে বেগম পাড়ায় আলিশান প্রাসাদ গড়ে। 

বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির যে দর্শনে জাতির পিতা আজীবন লড়াই করে গেছেন, সংগ্রাম করে গেছেন চিন্তার দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য। সেই দর্শন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে জাতির পিতার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বর্তমানের নীতি নির্ধারকগণ আমিত্ব নিয়ে এতবেশি ব্যস্ত যে, দল দেশের সাথে প্রতারণা করে আদর্শহীন চরিত্র ধারণ করে নিজের ভোগ, উপভোগ, সম্ভোগ ছাড়া তাদের সামগ্রিক চিন্তার প্রকাশ একেবারে নাই বললেই চলে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত এ দেশের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সরকারি-বেসরকারি প্রশাসনে সুশাসন ফেরার কথা ছিল সেখানে দিনে দিনে বেড়েছে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ। ঘটে গেছে দুর্নীতির সামাজিকীকরণ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রশাসন-এমন কোনো জায়গা নেয় যেখানে দুর্নীতি শেকড় ছড়ায়নি। ক্ষমতা ও ক্ষমতার বাইরে থাকা সর্বস্তরেই দুর্নীতি প্রশ্রয় পেয়েছে ভয়াবহভাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতার কাছে বন্দি হয়ে পড়েছে গোটা সমাজ। দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না-এমন মানসিকতাও তৈরি হয়েছে সবখানে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুর্নীতির কারণে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৮ হাজার কোটি টাকার জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) হারাচ্ছে দেশ। বলা হচ্ছে জিডিপির চলতি মূল্যকে ভিত্তি ধরে হিসাব করলে এ অঙ্ক দাঁড়াবে বছরে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বছর দুয়েক আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের কাছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের পাঠানো এক আধা সরকারি পত্র বিশ্লেষণেই এমন তথ্য উঠে আসে। দুদক চেয়ারম্যান তার সে চিঠিতে বলেন, ‘এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। দুর্নীতি রোধ করা গেলে প্রতি বছর দেশের জিডিপি ২ শতাংশ বাড়বে।’

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দুর্নীতি দমনের অভিযানকে সফল করতে হলে সরকারি ও বেসরকারী উদ্যোগ ও উদ্যমকে একযোগে কাজে লাগাতে হবে। তবে এ কঠিন লক্ষ্যে সফলতা অর্জনের একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে দুর্নীতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। সাধারণভাবে সরকারি প্রচার মাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা তেমন বেশী নয়। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে দেশের তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। 

বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশকে যারা ধারণ করেন তাদের সকলের প্রতি 'দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চ' এর আহবান, এভাবে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশ হেরে যেতে পারে না। আসুন সবাই মিলে আওয়াজ তুলে, একসাথে লড়াই করে দুর্নীতি প্রতিরোধ করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে বাঁধা সৃষ্টিকারী লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, রুখে দাঁড়াও প্রজন্ম। 

মনে রাখবেন-একমাত্র মানুষের মিলিত প্রতিরোধই পারে এই অন্ধকার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইটা জারি রাখতে। মানবতার জন্য-মুক্তিযুদ্ধের জন্য- প্রগতির জন্য দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চে একত্রিত হোন। ভুলে যাবেন না- ভালো মানুষদের অনৈক্যের ফলাফলটা পাল্টে দিতে পারে সব ইতিহাস- সব অর্জন। আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি–যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও করছি এবার দুর্নীতিবাজদের নিশ্চিহ্ন করবো-জয় বাংলা।

লেখক: প্রধান সমন্বয়ক, দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চ, সাধারণ সম্পাদক, গৌরব '৭১।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর