২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৮:১৫

দুর্নীতির চেইন ভাঙ্গা সহজ নয়

হাসিনা আকতার নিগার

দুর্নীতির চেইন ভাঙ্গা সহজ নয়

হাসিনা আকতার নিগার

সময় বদলে যাচ্ছে ক্রমশ। তথাকথিত রাজনীতির ধারা অনেকটাই একমুখী এখন। সাধারণত বলা হয়ে থাকে রাজনৈতিক দল থেকেই সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন নেতাকর্মী তৈরি হতে হয়। তা না হলে রাজনীতি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে দেশের রাজনীতি। বর্তমান সময়ে দেশে সত্যিকারের অর্থে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। 

অর্থ থাকলেই যেমন রাতারাতি নির্বাচন করে এমপি-মন্ত্রী হতে পারে। ঠিক একইভাবে বিত্ত বৈভবের  পাহাড় গড়ার জন্য রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করার দরকার হয় তাদের। 

অন্যদিকে প্রশাসনের প্রভাব ছাড়া দুর্নীতির পথে হাঁটা অসম্ভব। আর এ প্রশাসনই সরকারের ক্ষমতা পরিচালনায় বিশাল ভূমিকা পালন করে। সামগ্রিকভাবে এটাই বুঝা যায় দেশের দুর্নীতির কোনভাবেই এককভাবে করা সম্ভব নয়। একটা চেইনের মত কাজ করে দুর্নীতিবাজরা। আর এ চেইনকে ভাঙ্গা সহজ নয় বলে দুর্নীতি থেকে মুক্তি মেলে না রাষ্ট্র ও সমাজের। 

সাংবাদিক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুকে মেনে নেয়া কঠিন। তার অপরাধ কতটা গুরুতর ছিল তা এখনো অস্পষ্ট। একই মামলার অন্য অভিযুক্তরা জামিন পেলেও তিনি জামিন পায়নি। বরং দুনিয়া থেকে চলে গেলেন কারাগারে বন্দী অবস্থায়। তার লেখা রাষ্ট্রদ্রোহিতার দোষে দুষ্ট হলে বিচার হবার কথা। কিন্তু এমন মৃত্যু সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে এখন। কলমের স্বাধীনতা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। সাংবাদিকের অযাচিত মৃত্যু নতুন কিছু নয় দেশে। 

ঘটনার প্রবাহে এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলাই যেন অন্যায়। দুর্নীতি, ঘুষ, অন্যায়কে ছাড় দিতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী। তথাপি সমাজে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। বরং ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, ব্যাংকের টাকা পাচারকারী ও লুটেরাকারীরা সকল আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশে-বিদেশে। 

সব সম্ভবের এ দেশে ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরলে জীবন হয় শঙ্কিত। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেছে সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যার বিচারের। তাদের সন্তান মেঘ কেবল বুঝে বাবা-মা হারানোর যন্ত্রণা।  হয়তো এভাবেই সময়ের অতলে হারিয়ে যাবে সাংবাদিক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু  দুর্নীতির বেসাতি বহমান থাকবে। কারণ দুর্নীতির চেইন ভাঙ্গার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার মত সাহস, শক্তি ও সত্যিকারের রাজনৈতিক বলিষ্ঠ কণ্ঠের বড় অভাব এখন।

দেশপ্রেম থেকে যে রাজনৈতিক বোধের জন্ম হয়, আজ সে বোধশক্তি ও বিবেকবান মানুষরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। অর্থ আর পেশিশক্তির জয়জয়কার। তবে একটা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ছাড়া মানুষের নৈতিকতাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং অন্যায়কে অন্যায় বলার কারণে টুটি চেপে না ধরে প্রতিবাদ করতে হবে বিবেকবান মানুষদের। আর তা না হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে দুর্নীতিকে রোধ করা সম্ভব হবে না। আর এতে করে সরকারকে ভালো কাজের প্রশংসার পাশাপাশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে দুর্নীতিবাজদের অপরাধের জন্য।

লেখক: কলামিস্ট 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

সর্বশেষ খবর