৩১ জুলাই, ২০২১ ১৪:৪৭

হেলেনা ও নাটোর কাণ্ডে স্পষ্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ও তৃণমূলের চিত্র!

এফ এম শাহীন

হেলেনা ও নাটোর কাণ্ডে স্পষ্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ও তৃণমূলের চিত্র!

এফ এম শাহীন

হেলেনা, পাপিয়া কিংবা শাহেদ নামগুলো আজ দেশ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত! কিীকারণে পরিচিত তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা, মন্ত্রী, এমপি ভীষণ বিব্রত এমন বক্তব্য শুনতে পাই মিডিয়ার কল্যাণে! তারা কি আসলে বিব্রত নাকি এসব লোক দেখানো স্ট্যান্টবাজি ?  

একটানা দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে এইসব নাম ও তাদের কর্মকাণ্ড সবার সামনে আসার কথা বলছেন অনেকেই। কিন্তু যারা এইসব নিয়ে সবচেয়ে বেশি বক্তব্য রাখছেন দলীয় ফোরামে কিংবা মিডিয়াতে তারাই আবার নানা অজুহাতে এদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করেই এইসব সুযোগসন্ধানীদের সাথে নিয়ে পথ চলছেন কিংবা অনৈতিক সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে পদপদবী দিয়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তারা। হেলেনা, শাহেদ, পাপিয়ারা শুধু কি কেন্দ্রে নাকি জেলা উপজেলা পর্যায়েও শক্ত অবস্থান করছে তা দিনদিন পরিষ্কার হওয়ার পরেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? এমন প্রশ্ন তৃণমূল আওয়ামী কর্মীদের দিনদিন হতাশায় নিমজ্জিত করছে। এইসব ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কেন্দ্রীয় নেতাদের বিশ্বাস তো দূরের কথা মনে প্রাণে ঘৃণা করে তারা। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের সুযোগ থাকলে কেউ কেউ গণপিটুনির শিকারও হতে পারেন বলে আমার ধারণা।  

এসব লোভী বিকৃতরুচির মানুষদের দলে ভেড়ানোর পর তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যখন সবার সামনে আসছে তখন ঐ নেতারা হাত ঝেড়ে ফেলছে। কেউ আর তখন এদের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। কিন্তু এই দলটির সভানেত্রী হলেন শেখ হাসিনা। দিনশেষে তাঁকেই বিব্রত করতে কি এই আয়োজন ? এমন প্রশ্নের উত্তর কি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দিতে পারবেন? কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমাকে বাদে সবাইকে কেনা যায়’। সত্যিই তাই; এমন চিত্রের প্রমাণ আজ আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে সে হোক কেন্দ্র কিংবা তৃণমূল। দুর্নীতির কথা বাদই দিলাম অর্থ ও নারীতে যেন উন্মাদ হয়ে আছেন সবাই! ভোগ-উপভোগ-সম্ভোগের নিয়ামক করে তুলেছে আজকের রাজনীতিকে। আগামী প্রজন্মের কাছে যে উদাহরণ তৈরি করছি আমরা তা সত্যি ভীষণ ভয়ংকর! 

এবার আসি গত দুইদিন আগে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও প্রসঙ্গে। ভিডিওটিতে দেখলাম নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস কান্না জড়ানো কণ্ঠে নেতা কর্মীদের সাথে বিগত দিনে তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় এবং অপমানের বর্ণনা দিচ্ছেন। তাঁরই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাটোর জেলা সদরের এমপি শিমুল তাকে কিভাবে হেনস্থা করেছেন এবং সন্ত্রাসীদের দিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নাটোরে বসবাস করতে দেয়নি! এই সংসদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও সন্ত্রাসের খবর মিডিয়াতে এসেছে বারবার কিন্তু কেন্দ্র থেকে কয়েকজন নেতা তাঁকে রক্ষা করছেন এমন দাবি স্থানীয়দের। তাঁর বিরুদ্ধে দেশবিরোধী বিএনপি জামায়াতের একাধিক নেতাকে আওয়ামী লীগে জায়গা করে দেয়ার অভিযোগ বেশ পুরনো। একজন ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যদি এমন সন্ত্রাসের শিকার হয় তাহলে সেখানে সাধারণ মানুষ কেমন জিম্মি অবস্থায় আছে তা অনুমান করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়।  

নাটোরের শিমুলের মত এমন সংসদ বা নেতা আজ বেশিরভাগ জেলায়। খোঁজ নিয়ে দেখুন তাদের ক্ষমতার দম্ভ ও অপব্যবহারে সত্যিকারের আওয়ামী লীগ কর্মী ও পরিবার আজ শুধু কোণঠাসা নয় আতঙ্কিতও বটে। জেলা উপজেলার বেশিরভাগ নেতারাই আজ মাদক ব্যবসায়ী ও হাইব্রিডদের দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু কন্যার সকল অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হয় বৈকি। আজ অনেকেই বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত বিএনপি শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যতটা বাধা তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে এমন আদর্শহীন নেতাকর্মীদের সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ড! জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে এমন আদর্শহীন ব্যক্তিদের হাতে রাষ্ট্র-সমাজ নিয়ন্ত্রণের চাবি দেখে দেশপ্রেমিক যেকোনো নাগরিকের রক্তক্ষরণ হওয়া অস্বাভাবিক নয় । 

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, গৌরব ‘৭১
সম্পাদক, ডেইলি জাগরণ ডট কম

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর