আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের আবাসন ব্যবসার বাজার প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টা মার্কেট ইনসাইটস। আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থাটি বলছে, বর্তমানে আবাসন খাতে ব্যবসার বাজার ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। ২০২৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর এ বাজারের প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে। সে হিসাবে ২০২৮ সালের মধ্যে দেশের আবাসন খাতের বাজার ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। বিশেষ করে তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। ঢাকাসহ কয়েকটি এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে বেশি খোঁজখবর নিচ্ছেন ক্রেতারা। ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্লটের চাহিদাও। এতে জমির দামও সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, গৃহঋণের জন্য খুব কম মানুষ ব্যাংকে যাচ্ছে। কিছু মধ্যবিত্ত ঋণ নিচ্ছে। তবে সংখ্যায় খুবই কম। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহজ কিস্তিতে গৃহঋণ দিলে মানুষ উপকৃত হতো এবং দেশের আরও বেশি মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে পারত। যেহেতু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান মৌলিক চাহিদা। এর মধ্যে আবাসন একটি। সরকার এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করলে আবাসন সবার জন্য আরও সহজ হতো। আবাসন ব্যবসা আরও একটু চাঙা হতো। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের তথ্যমতে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয়েছে। পরবর্তীতে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার পাশাপাশি কভিড মহামারির প্রভাব পড়লে কমে যায় কেনাবেচা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি হয় ১০ হাজারের মতো ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিক্রি কমে ১০ হাজারের নিচে নেমে আসে। আগামী বছরের শুরুর দিকে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে আবাসন খাত। এ বিষয়ে রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, এখনো আমাদের সেকেন্ডারি মার্কেটের জন্য আমরা কোনো নীতিমালা পাইনি। অন্যান্য দেশে সেকেন্ড হ্যান্ড ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রেশন ব্যয় প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয়বার অর্ধেকেরও কম থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে যতবারই কেনাবেচা করেন, একই নিবন্ধন ফি দিতে হয়। নিবন্ধন ফি কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের মতো ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি যদি ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়, তাহলে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে সব মিলিয়ে আমাদের দেশে নিবন্ধন ফি ১৫ শতাংশ হয়ে যায়, আরও অন্যান্য খরচ মিলে এটা ১৮ শতাংশে যায়। ক্রেতাদের জন্য এটাও একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। আমরা এটাও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, এটাকে সিঙ্গেল ডিজিটে (৭, ৮ বা ৯ শতাংশে) নামিয়ে আনা যায় কি না। আমাদের পার্শ্ববর্তী সব দেশেই এরকম আছে।
রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান আরও বলেন, আমরা শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করছি না, অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছি। সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ দুই শতাধিক লিঙ্কেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সমগ্র নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। ৫০ লাখের অধিক শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের জোগান দিয়েছে। আমাদের আবাসন খাত থেকে আয় করা অর্থ পুনরায় অন্য উৎপাদনশীল সেক্টরে বিনিয়োগ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবার জন্য আবাসনের কাজ করছি। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। দরকার জমি উন্মুক্তকরণ, ট্যাক্স উন্মুক্তকরণ এবং প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপে জমি ফ্রি করে দিতে হবে।
হিসাব-নিকাশ করে লাভটাও সীমিত করে দিলে সাশ্রয়ী অর্থাৎ কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করা সম্ভব হবে।
ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী রফিকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আবাসন শিল্পে টাইলসও একটি গুরুত্ব উপাদান। আমদানিনির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদনে ক্রেতার চাহিদা পূরণে এ শিল্পের সাফল্য দৃশ্যমান। দেশীয় কোম্পানিগুলো ৮৬ শতাংশ ক্রেতার চাহিদা পূরণ করছে এবং ১৪ শতাংশ আমদানিনির্ভর। ক্রেতার চাহিদামাফিক মানসম্পন্ন পণ্যের জোগান দিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলো আমদানিনির্ভরশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে প্রতি বছর। এ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া আরও বলেন, অবকাঠামোগত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বড় সহযোগী হিসেবে কাজ করছে আবাসন শিল্পের বড় প্রতিষ্ঠান রিহ্যাব। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে তিন দশক থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রিহ্যাবের সুবাদে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পরিবার নিজ ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। আমরা সবার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে চাই। সেজন্য সরকারকে সুযোগ দিতে হবে।