বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করার লক্ষ্য সামনে রেখে বিগত তিন দশক থেকে কাজ করছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারাবাহিক কাজের কারণে অনেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার অর্থাৎ বাসস্থানের স্বপ্ন সফল হয়েছে। এরই মধ্যে ৩ লক্ষাধিক পরিবার নিজ ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। রিহ্যাবের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কর্মকান্ড নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সঙ্গে কথা বলেছেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর নিজস্ব প্রতিবেদক হাসান ইমন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্তমানে আবাসন ব্যবসার অবস্থা কেমন?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : বর্তমানে নানা সংকটে জর্জরিত আবাসন খাত। উচ্চ নিবন্ধন ব্যয়, সুদের হার বৃদ্ধি এবং নতুন ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) কারণে দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতা চলছে। ফলে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। এ খাতসংশ্লিষ্ট অসংখ্য মানুষ বর্তমানে বেকার। নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে সমস্যা হওয়ায় তলানিতে এসে ঠেকেছে ফ্ল্যাট তৈরি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্তমানে আবাসন খাতের চ্যালেঞ্জ কেমন দেখছেন?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : দেশের আবাসন খাত চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে যাচ্ছে। বিশেষ করে ’২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। অর্থনীতির অন্যতম একটি খাত আবাসন। এর থেকে উত্তরণের জন্য আমরা কাজ করছি। আবাসন খাতের ওপর সরকারের যে পলিসি ছিল সেটা সংশোধনের জন্য কাজ করছি। বিশেষ করে ড্যাপ সংশোধনের জন্য কাজ করছি। যদি সংশোধন হয় তাহলে আবাসন খাতের কিছুটা পরিবর্তন হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহঋণে ক্রেতারা কি উপকৃত হচ্ছেন?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : গৃহঋণের জন্য খুব কম মানুষ যাচ্ছে। কিছুসংখ্যক মধ্যবিত্ত ঋণ নিচ্ছেন। তবে এর সংখ্যা খুবই কম। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যাংকসহ যদি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সহজ কিস্তিতে গৃহঋণ দিত তাহলে মানুষ উপকৃত হতো এবং দেশের মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে পারত। যেহেতু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান মৌলিক চাহিদা। এর মধ্যে আবাসন একটি। সরকার এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করলে আবাসন সবার জন্য আরও সহজ হতো। আবাসন ব্যবসা আরও একটু চাঙা হতো।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্তমানে কোন ধরনের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : বর্তমানে ১২০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। বিশেষ করে তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। মোহাম্মদপুর, গুলশান, বনানী, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে বেশি খোঁজখবর নিচ্ছেন ক্রেতারা। ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্লটের চাহিদাও। এতে জমির দামও সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অধিকাংশ আবাসন ব্যবসা ঢাকাকেন্দ্রিক কেন? অন্যান্য বিভাগকেন্দ্রিক হচ্ছে না কেন?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : ঢাকায় জনসংখ্যা বেশি। এই জনবহুল এলাকায় মানুষের চাহিদা বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর মানুষও ঢাকাকেন্দ্রিক ফ্ল্যাট কিনতে চায়। সেজন্য ঢাকাকেন্দ্রিক একটু বেশি। তবে অন্যান্য বিভাগেও আবাসন ব্যবসা রয়েছে। আমাদের দ্বিতীয় আবাসন ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামে। এরপর খুলনা, সিলেট, বগুড়া, রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগে আবাসন প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। শুধু বিভাগ নয়, জেলা শহরেও গড়ে উঠছে। বিশেষ করে কুমিল্লায় আবাসন তৈরি হচ্ছে এবং বিক্রিও হচ্ছে। মানুষের চাহিদা বাড়ায় ধীরে ধীরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও চলে যাবে এ আবাসন ব্যবসা।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আবাসন ব্যবসা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা কেমন?
মো. ওয়াহিদুজ্জামান : আমরা শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করছি না, অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছি। সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ দুই শতাধিক লিঙ্কেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সমগ্র নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ।
অর্ধ কোটির বেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের জোগান দিয়েছে। আমাদের আবাসন সেক্টর থেকে আয় করা অর্থ পুনরায় অন্য উৎপাদনশীল সেক্টরে বিনিয়োগ হচ্ছে।