শিরোনাম
- ‘এমনভাবে আইন সংস্কার করতে চাই যাতে আরেকটি ফ্যাসিবাদ গড়ে ওঠা কঠিন হয়’
- আইসিসির মে মাসের সেরার দৌড়ে আছেন যারা
- সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে পালিয়েছে ৪০ লাখ মানুষ: জাতিসংঘ
- ভারতে গাড়ি উৎপাদনে আগ্রহী নয় টেসলা
- ‘পুশ ইন’ বন্ধে দিল্লিকে আবারও চিঠি দেবে ঢাকা : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- সীমান্তে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখল বাংলাদেশে বসবাসকারী দুই মেয়ে
- নবীনগরে অবৈধ গরুর বাজার উচ্ছেদ
- সাবেক এমপি শাহিন চাকলাদার ও মাসুদ উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- গরু বিক্রি করতে এসে লেকে গোসল, শিশুর করুণ মৃত্যু
- ঈশ্বরদী ইপিজেডে পানিবাহিত রোগে ২ নারীর মৃত্যু
- জেনে নিন বায়তুল মোকাররমে ঈদের ৫ জামাতের সময়সূচি
- চুয়াডাঙ্গায় ‘টেস্টি ট্রিট’ এর শোরুম চালু
- ‘আমাদের টিম প্রতিটি হাটে কাজ করছে, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা’
- টাঙ্গাইলে অভ্যন্তরীণ নদীর পানি আরও বাড়ছে
- বোচাগঞ্জে নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
- শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহীন মিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়ালো বসুন্ধরা শুভসংঘ
- স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক এমপি তাজুল ইসলামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য বড় ঘোষণা দিলেন বিল গেটস
- সাবেক এমপি বকুলের দুই বাড়ি জব্দ-১০ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
- বগুড়ায় ঋণ খেলাপী মামলায় ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার
দুবাইয়ে বাড়ছে ভাড়াটে সাংবাদিক!
কামরুল হাসান জনি, দুবাই
অনলাইন ভার্সন

বাংলাদেশি বিভিন্ন মিডিয়ার লোগো ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রায় সবকটি বিভাগ চষে বেড়াচ্ছে নামধারী কিছু ভুয়া সাংবাদিক। অফিসিয়ালি কোনো অনুমতিপত্র না থাকলেও বিভিন্ন মিডিয়া অফিসের বার্তা বিভাগে কর্মরতদের সঙ্গে টাকার লেনদেনে প্রবাসের সংবাদ প্রকাশে সহায়তা নিয়ে নিজেদের বড় মাপের সাংবাদিক হিসেবে জাহির করাসহ মূল ধারার সাংবাদিকদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে এদের বিরুদ্ধে। এদের দেখা মিলে রাত-বিরাতে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে। এক রাতের জন্য ৫০ থেকে ১০০ দিরহাম মজুরি নিয়ে ক্যামেরা হাতে দায়িত্ব পালন করে এরা। এদের বিচরণ সীমাবদ্ধ কমিউনিটি প্রোগ্রাম আর হোটেল-রেস্তোরাঁয়। ভূরি ভূরি অভিযোগ নিয়েও ওরা (!) হরহামেশা প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ালেও এ সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা বা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের যেন কেউ নেই!
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশি কয়েকটি ইলেক্টনিক মিডিয়ার লোগো ব্যবহারকারী এসব লোকজন সাংবাদিক পরিচয়ে কমিউনিটি থেকে বিভিন্ন ভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অভিযোগ আছে, টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার করা হবে শর্তে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ দাবিও করে তারা। কিন্তু আদৌ কোনো চ্যানেল বা প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে তাদের নামে সংবাদ কোথাও প্রকাশ বা প্রচার হয়েছে কিনা তাও সন্দেহ রয়েছে। শুধু তাই নয়, অনুমতি ব্যতীত ওসব সাংবাদিক(!) মিডিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে নিজস্ব ভিজিটিং কার্ড প্রদান ও আমিরাতে প্রকাশিত বিভিন্ন ম্যাগাজিনে মিডিয়া প্রতিনিধি লেখেন বিনা দ্বিধায়।
এমন কয়েকজন ভাড়াটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, নির্দিষ্ট কোনো মিডিয়ার কর্মী নয় তারা। তবে একেক দিন একেকটি মিডিয়া প্রতিনিধি (আমিরাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত) তাদের ক্যামেরা হাতে কাজে পাঠান। কাজ শেষে তারা মজুরি হিসেবে পান ৫০ থেকে ১০০ দিরহাম। কিন্তু যেসব আচার-অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত থাকে সেখানে পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের মর্যাদায় সময় কাটান! তবে সাংবাদিকতার ওপর পড়ালেখা বা এ সম্পর্কে তাদের ন্যূনতম অভিজ্ঞতা যে নেই, সে সব তাদের কর্মকাণ্ডেই পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে নিজের কর্মস্থলে হাজার ব্যস্ততার মাঝেও আলাদা সময় বের করে শুধু দেশ ও দশের কথা মাথায় রেখে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে মূলধারার প্রবাসী সাংবাদিকরা। কাজের ক্ষেত্রে শত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও সব সমস্যার মোকাবিলা করেও তারা সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ভাড়াটে সাংবাদিকদের উত্পাত, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের এহেন আচারণ নিয়ে কথা হয় প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির সংগঠক ও আমিরাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন রিপোর্টারের সঙ্গে। মিডিয়ার নিজস্ব রিপোর্টার বা নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যামেরাম্যান ছাড়া অন্য সাধারণ মানুষের হাতে মিডিয়ার লোগো চিহ্নিত ক্যামেরা ব্যবহার করা কি ঠিক ?
এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা ও বাংলা এক্সপ্রেস সম্পাদক হারুনুর রশীদ জানান, অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার অবশ্যই ঠিক না। মিডিয়ায় কাজ করার জন্য প্রকৃত ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে অনুমোদন ছাড়া অন্য কেউ তাদের লোগো ব্যবহার কার নিয়মবহির্ভূত ও বেআইনি। তবে যারা এ সব করছে, মূলত টাকার জন্যই করছে !
প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও এনটিভি প্রতিনিধি শিবলী আল সাদিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কখনোই ঠিক নয়। এটা সাংবাদিকদের জন্য কলঙ্ক। যারা এ সব করে বেড়াচ্ছে তারা সাংবাদিকতার কিছুই বুঝে না এবং এদের প্রতিরোধ করতে হবে। তা ছাড়া আগামীতে এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে কিছু কিছু টিভি চ্যানেল তাদের ফায়দা লুটার জন্য হয়তো নিয়োগবিহীন ব্যক্তিদের দিয়ে এ সব কাজ করিয়ে নিচ্ছে, যা কোনোভাবেই সহনীয় নয়। আমি এটাকে কোনোভাবেই সুদৃষ্টিতে দেখছি না। কেননা এদের কারণে প্রবাসে মূল ধারার সাংবাদিকতার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাদের ক্যামেরা হাতে দেখা যায় তাদের অফিসিয়ালি অনুমোদন আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।
বাংলাভিশন ও দৈনিক পূর্বকোণ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর কবির বাপ্পি বলেন, আমি ছাড়াও আমিরাতে ফারুক চৌধুরী ও মোর্শেদ আলম বাংলাভিশনের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। তবে প্রবাসের বিভিন্ন স্থানে আমরা দেখি অননুমোদিতভাবে কিছু ভুয়া গণমাধ্যম কর্মীর বহর এখানে গড়ে উঠেছে। যাদের এ সংক্রান্ত কোনো যোগ্যতা নেই। এতে প্রকৃত প্রফেশনালদের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়া কোনো মিডিয়ার লোগো ব্যবহার গর্হিত অপরাধ।
সাংবাদিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও একুশে টেলিভিশনের আমিরাত প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা প্রকৃত পক্ষে প্রবাসে সাংবাদিকতা করছে এদেরকে কমিউনিটিতে লোকজন ভাল ভাবেই চেনে। তবে হয়তো কেউ কেউ না জেনে বুঝে লোগো সংযুক্ত ক্যামেরা দেশে এদেরকে (!) সাংবাদিক মনে করে। প্রকৃত পক্ষে এরা কোন মিডিয়ার প্রতিনিধি না। তবে কেউ কেউ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের হেল্পারের ভূমিকায় বিভিন্ন সময় কাজ করতে দেখা যায়। যেহেতু এদের উত্পাত বাড়ছে সে জন্য প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সর্তকতামূলক একটি আলোচনা সভা ডেকে কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া যেতে পারে কে মিডিয়ার প্রতিনিধি, কে ক্যামেরাম্যান। আর কারা নিজেদের স্বঘোষিত সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে!
মিডিয়া অফিসের অনুমতি ছাড়া তাদের লোগো ব্যবহার করা যদি ঠিক না হয়ে থাকে তবে প্রবাসী সাংবাদিকরা কেন এমনটা করছে ? এই প্রশ্নের জবাবে আমিরাতের প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু মুসা বলেন, একটি মিডিয়ার লোগো সে মিডিয়ার নিজস্ব কর্মী ছাড়া অন্য কেউ ব্যবহার করা কখনো ঠিক না। যারা ব্যবহার করে তারা কাউকে দাম দেয় না, সম্মান দেখায় না। বরং এখানে চলে টাকার খেলা। ওরা(!) টাকা আর টাকা বুঝে।
এ বিষয়ে মতামত নেওয়ার জন্য বাংলাভিশনের দুবাই প্রতিনিধি ফারুক চৌধুরীর ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আমিরাতে চষে বেড়ানো ভাড়াটে সাংবাদিকদের কারণে মূল ধারার সাংবাদিকদের প্রতিও রীতিমতো বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অনাস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ক্ষমতার জোরে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা ওসব ভাড়াটেকে খাটাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন কমিউনিটির নেতারা। তারা এ সব ভুয়া সাংবাদিককে (!) প্রতিহত করার দাবি ও এ ব্যাপারে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এই বিভাগের আরও খবর