দালালকে মাথাপিছু ২৫ লাখ টাকা দিয়ে ৬৯ বাংলাদেশী যুবকের আমেরিকান স্বপ্নবন্দি হয়ে পড়েছে টেক্সাসের এল পাসো ডিটেনশন সেন্টারে। ৩ মাস ২০ দিন যাবত তারা যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন বিভাগের এ ডিটেনশন সেন্টারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বৃহত্তর সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং ঢাকা জেলার এসব বাংলাদেশী ভারত হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো থেকে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তথা ইমিগ্রেশনের এজেন্টের হাতে ধরা পড়েন। এরপরই তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। বাংলাদেশে তাদের জীবন বিপন্ন বলে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তারা। কিন্তু ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা তাদের এ বক্তব্য সন্দেহের উদ্ধে রাখতে পারেনি বিধায় কাউকেই জামিনে মুক্তি দেননি কিংবা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদানের কোন সিদ্ধান্ত দেননি। ইমিগ্রেশন জজের সামনে তাদেরকে হাজির না করা পর্যন্ত আটকাদেশ দিয়ে ঐ ডিটেনশন সেন্টারে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে ইউএস ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (U.S. Immigration and Customs Enforcement (ICE) সাথে যোগাযোগ করলে এর মুখপাত্র লেটিসিয়া জামারিপা ( Leticia Zamarripa) ১০ এপ্রিল জানান, ৬৯ জনের মধ্যে একজনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কারের চূড়ান্ত নির্দেশ জারি হয়েছে। তিনি বহিস্কারের অপেক্ষায় রয়েছেন। আরো ৩ জনের বিরুদ্ধে বহিস্কারাদেশ জারি করা হলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না।
কারণ, তাদের কোন পাসপোর্ট নেই। বাংলাদেশের কন্স্যুলেট থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কন্স্যুলেটের সাথে কথা বলতে চাননি। অবশিষ্ট ৬৫ জনের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন বিবেচনাধিন রয়েছে। শীঘ্রই তাদেরকে ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজির করা হবে। এরপর মাননীয় আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
লেটিসিয়া জামারিপা আরো জানান, এসব বাংলাদেশী চাইলেই সরকারী খরচে এটর্নী (আইনজীবী) প্রদান করা হবে। বাংলায় কথা বলার জন্যে অনুবাদকও দেয়া হবে।
ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থানরতদের মধ্যে ২৩ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মুজিব, আক্তার হোসাইন, মারুফ আহমেদ, কামরান আহমেদ, এনামুল হক, আবুল কাশেম, শোভা, নাসির, সাইফুল ইসলাম, পলাশ, আলী হোসেন সোহেল, জেবলু মিয়া, সেবুল হোসাইন, মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, আহমেদ লুকমান, মোহাম্মদ খালেদ আহমেদ, জাহিদুর রহমান, মোহাম্মদ তারেক আহমেদ, রাসেল আহমেদ, খালেদ মিয়া, সোহাগ, রাহাত শরিফুল ইসলাম ।
জানা গেছে, ঢাকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র এদের কাছে থেকে নগদ অর্থ নিয়েছে। সে সময় প্রত্যেককে জানানো হয় যে, মেক্সিকো থেকে দুর্গম পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারলেই গ্রিণকার্ড পাওয়া যাবে। সে আশায় তারা বিভিন্ন দেশ পাড়ি দেন। মেক্সিকো থেকে ৮০/৯০ মাইল দুর্গম মরম্ন পথ পাড়ি দেয়ার পর অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা তথা টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ঢুকেও পড়েছিলেন সকলে। কিন্তু বিধি বাম। একইসাথে তারা ধরা পড়েছেন।
বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিলে তাদের জীবন বিপন্ন, এ কথা ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে বললেও এখন পর্যন্ত তারা ঐ বক্তব্যের সপক্ষে কোন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে পারেননি। সেটি সম্ভব না হলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে সকলকেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন এটর্নীরা জানিয়েছেন। তবে, যতক্ষণ পর্যন্ত ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এদের ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা না হবে ততদিন ঐ ডিটেনশন সেন্টারেই অবস্থান করতে হবে সকলকে। এভাবে যদি আরো ১০০ দিন অতিবাহিত করতে পারেন তাহলে তাহলে তাদেরকে জামিনে মুক্তি দেয়া হবে। সে সময় তারা ওয়ার্ক পারমিটও পাবেন।
জানা গেছে, গ্রেফতারের পর ৩ মাস ২০ দিন অতিবাহিত হলেও দালাল চক্রের কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। এমনকি নিউইয়র্ক অথবা লসএঞ্জেলেসে তাদের কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা বন্ধু রয়েছে বলে ঐসব যুবকেরা জানতে পারেননি বা কোন প্রবাসীর সাথে এখন পর্যন্ত যোগাযোগও হয়নি। এর আগেও অসংখ্য বাংলাদেশী টেক্সাসের ঐ সীমান্তে ধরা পড়েছিলেন। পরবর্তীতে নিউইয়র্ক থেকে তাদের স্বজনেরা এটর্নীর মাধ্যমে জামিনে মুক্ত করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব যুবকের অভিভাবকেরা ভিটেমাটি বিক্রি করে দালালকে টাকা দিয়েছেন। সকলেই ভেবেছিলেন যে, আমেরিকায় পাড়ি জমাতে পারলেই কাড়ি কাড়ি ডলার পাবেন। প্রসঙ্গত যে, আমেরিকায় যে কোন উপায়ে পাড়ি দিতে পারলেই গ্রিণকার্ড পাওয়া যাবে বলে দালাল চক্র যে কথা বলেছে সেটি আদৌ সত্য নয়।