যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ‘নিরাপদ জলবায়ু’ সম্পর্কিত কংগ্রেসনাল ককাসের চেয়ার, কংগ্রেসম্যান এ্যালান লোয়েনথান, এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং গ্লোবাল এনভারয়রনমেন্ট বিষয়ক সাব কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান ড্যানা রোহরাবেচারের সাথে পৃথক বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। এ সময় কংগ্রেসম্যান এ্যালান লোয়েনথান বলেন, ‘বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত রয়েছি এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সার্বিক সহযোগিতা করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র।’ ‘বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বি-পাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির এই কংগ্রেসম্যান।
গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেসম্যান লোয়েনথানের সাথে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। এ সময় তারা জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কংগ্রেসম্যানকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন। কংগ্রেসম্যান এ্যালান লোয়েনথাল বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একজন প্রভাবশালী প্রবক্তা।
রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে অতোপ্রোতভাবে জড়িত। যদিও বাংলাদেশে খুব স্বল্প মাত্রার কার্বণ নিঃসরণ করে তথাপি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ।’
রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন তাকে অবহিত করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য একটি ট্রাস্টফান্ড গঠন করেছে এবং এই ফান্ডের অধীনে প্রায় ২৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে।’
রাষ্ট্রদূত আরও উল্লেখ করেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠে ১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে দেশের প্রায় ২৫/৩০ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।’ তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু বাংলাদেশের জন্যই হুমকি নয়, ইহা প্রতিবেশী দেশসমূহসহ সারাবিশ্বের জন্য হুমকিস্বরুপ।
রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন এ সময় আরও উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশে ইউএসএইড-এর অধীন ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে যার প্রাক্কলিত ব্যয় ৮৬.০৬ মিলিয়ন ডলার। এ প্রকল্পগুলো বাংলাদেশে জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সহয়তা করবে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বকে কার্বণ ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ বন্ধের প্রয়োজনীয় চুক্তি প্রণয়ণের আহবান জানান।
রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন কংগ্রেসম্যানকে বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উত্থান এবং বিএনপি ও জামায়াত জোটের সহিংস কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করেন। কংগ্রেসম্যান এ্যালান লোয়েনথাল রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান এবং সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন।
দূতাবাসের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) নাঈম আহমেদ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে, গত ২২ জুলাই এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং গ্লোবাল এনভারয়রনমেন্ট বিষয়ক সাব কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান ড্যানা রোহরাবেচারের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন। এ সময় উদ্ভূত পরিস্থিতির অবসানে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টি থেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার এই কংগ্রেসম্যানের আন্তরিক সহায়তা কামনা করেন রাষ্ট্রদূত।
মার্কিন কংগ্রেসে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার এই রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান উল্লেখ করেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী নিস্পত্তির মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।’
বিডি-প্রতিদিন/২৪ জুলাই, ২০১৫/মাহবুব