বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সুন্দর দেশ বিনির্মাণ ও প্রবাসীর স্বপ্ন- একই সুতোয় গাঁথা থাকলেও প্রবাসীরা কখনো কখনো নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তেমনি ওমানে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘ পাঁচ মাস জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এক রেমিটেন্স যোদ্ধা বিমানের উদাসীনতায় হতাশ হয়ে জীবন্ত লাশে পরিণত হয়েছেন।
গুরুত্বর আহত ওমান প্রবাসী মো. বেলাল হোসেন চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানার সাধনপুর বদরের দরগা এলাকার আব্দুল ছালামের ছেলে।
জানা যায়, মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মো. বেলাল হোসেন দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে আসছেন। তার আকুতিতে ভারী হয়ে উঠেছে ওমানের সুমাইল হাসপাতালের আকাশ বাতাশ। সেখানে যেন মানবতা নির্বাসিত। এক দিকে কর্তৃপক্ষের হাসপাতাল ত্যাগের নির্দেশ, অন্যদিকে নিজের দেশের সরকারি বিমান সংস্থার অসহযোগিতা। এদিকে, বীমা কোম্পানি অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়ায় এখন তার চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এই অসহায় মানুষটি এখন পরিণত হয়েছেন জীবন্ত লাশে।
ওই রেমিটেন্সযোদ্ধা হয়তো আর কখনই সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারবেন না জানিয়ে দেশটির ডাক্তাররা বলেছেন, নিজের পরিবার পরিজনের কাছাকাছি থাকলে হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও হতে পারেন।
কিন্তু দেশেও ফিরতে পারছে না মো. বেলাল হোসেন। কেননা নিরাপত্তার দোহাই আর ছোট বিমানের অজুহাতে এমন রোগী বহন করতে অস্বীকার করেছে সরকারি বিমান। আর অন্য এয়ারলাইন্সগুলোতে খরচের পরিমাণ অনেক বেশি যা বহন করা এই রোগীর পক্ষে অসম্ভব।
ওমানে নিযুক্ত বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার নিজের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে বলেন- 'দেখুন এসব রোগী পাঠানোর ক্ষেত্রে উপরের কিছু নির্দেশনা আছে, আমরা চাইলেও এর বাইরে যেতে পারছি না।
বিমানে ভ্রমণ সুবিধার জন্য যেসব নিয়ম ও শর্তের কথা ওই কর্মকর্তা বলেছেন তা একজন রোগী নয়, কেবল একজন সুস্থ মানুষেরই হতে পারে।
দেশের একমাত্র সরকারি বিমান সংস্থার এমন উদাসীনতায় এই ভুক্তভোগীসহ গোটা ওমান প্রবাসীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বারবার বিমান কর্মকর্তাকে অনুরোধের পরও তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রবাসীরা এমন দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন- যেন বিমানে রোগী কিংবা লাশ বহনে নিয়ম-নীতিগুলো আরও সহজতর করে বিনা খরচে দেশে ফেরত পাঠিয়ে প্রবাসীদের এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি দেন।
জানতে চাইলে দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) টেলিফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দূতাবাসের লেবার উইংয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে ফোন ধরিয়ে দেন।
পরে আব্দুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে দূতাবাসের বক্তব্য হচ্ছে- তারা এ রকম আরও অনেক রোগী ও লাশ দেশে পাঠানো নিয়ে নিজেরাও যথেষ্ট বিপাকে রয়েছেন।
ইতোপূর্বে দূতাবাসও বিমানকে অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম