করোনাভাইরাসের প্রকোপে বেকার হওয়া আমেরিকানদের অধিকাংশই এখন পর্যন্ত কাজে যোগদানে সক্ষম না হওয়ায় পারিবারিক কোটায় গ্রীনকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল ৬০ দিনের যে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছিল তাকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল রাখার নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২২ জুন সোমবার অপরাহ্নে এক প্রক্লামেশনে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বাজারের জন্যে হুমকিস্বরূপ কোন বিদেশীকে অভিবাসন, নন-অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার অনুমতি দেয়া হবে না। কারণ, গ্রীনকার্ড নিয়ে যারাই আসবেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সকল সেক্টরে কাজে নিয়োজিত হবার অধিকার পাবেন। তারা যদি স্বল্প মজুরিতে কাজে ঢুকে পড়ে তাহলে করোনার কারণে বেকার হওয়া আমেরিকানরা বেকারই থেকে যাবেন।’
এই ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ১০০১৪ নম্বরের সেই ঘোষণাপত্র জারির পর শ্রম মন্ত্রণালয় এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা প্রোগ্রামের গতি-প্রকৃতি গভীরভাবে খতিয়ে দেখেছেন। তারা অনুধাবন করেছেন, নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় আগতরাও বেকার হয়ে থাকা আমেরিকানদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় একটি হুমকি। করোনার তাণ্ডবে বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার স্বার্থে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যুর ব্যাপারটিও একই সময় পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হচ্ছে।
ঘোষণাপত্রে উল্লখ করা হয়েছে, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিদেশী শ্রমিকের মতোই আমেরিকান শ্রমিকেরাও অত্যন্ত যোগ্য যে কোন সেক্টরে কাজের জন্য। এমনকি যারা সাময়িক ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে প্রতি বছর কাজের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তাদের চেয়েও অনেক বেশী যোগ্য আমেরিকান শ্রমিক-কর্মচারিরা।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে আগতদের অনেকেই স্ত্রী/স্বামী-সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তারাও আমেরিকান কর্মজীবীদের জন্যে ক্ষতির কারণ হয়ে পড়েন। কারণ, তারাও বিভিন্ন সেক্টরে কাজে নিযুক্ত হন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে সাময়িক সময়ের কাজের জন্যে বিদেশী শ্রমিক-কর্মচারিদের অনুমতি প্রদানকে আইনসিদ্ধ করা হলেও বর্তমানের অস্বাভাবিক একটি পরিস্থিতিতে তা মোটেও কল্যাণকর হতে পারে না।
উদাহরণ হিসেবে এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় এক কোটি ৭০ লাখের অধিক আমেরিকান চাকরি হারিয়েছে। এসব শূন্য পদ পূরণের জন্যে এইচ ২-বি নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যুর পক্ষে রয়েছে ঐসব কল-কারখানার মালিকেরা। একইসময়ে আরও ২০ মিলিয়ন অর্থাৎ দুই কোটি আমেরিকান বেকার হয়ে পড়েছেন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-কারখানায়। সে সব স্থান পূরণে যদি এইচ-ওয়ান বি এবং এল ভিসায় বিদেশী লোক আনা হয় তাহলে আমেরিকানরা বেকারত্ব লাঘবের সুযোগ পাবে কোথায়?
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ইতিপর্বে জারিকৃত আদেশে যেভাবে বলা হয়েছে যে, করোনার তাণ্ডবে বেকার হওয়া আমেরিকানদের স্বার্থে ইমিগ্র্যান্ট এবং নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যু স্থগিত রাখতে হবে। বিশেষ করে বেকার হয়ে পড়া আফ্রিকান-আমেরিকান, যারা উচ্চতর ডিগ্রিধারি নন এবং ঐতিহাসিক কারণে যারা দক্ষতাপূর্ণ কর্মীতেও রূপান্তরিত হতে পারেননি, তাদের স্বার্থ আগে সংরক্ষণ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপরোক্ত ধরনের ইমিগ্র্যান্ট ও নন-ইমিগ্র্যান্ট (বিশেষ পরিস্থিতি ব্যতিত, যেমন সিটিজেনদের স্বামী/স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা) ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে ২৪ জুলাই এবং তারপরের প্রতি ৬০ দিন অন্তর শ্রম মন্ত্রীর সাথে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী পরামর্শ করবেন এই স্থগিতাদেশের আলোকে। প্রয়োজনে তারা এই আদেশ বাতিল অথবা দীর্ঘতর করার পরামর্শ দিতে পারবেন হোয়াইট হাউজকে অর্থাৎ তাদের সুপারিশের ওপর নির্ভর করছে এই স্থগিতাদেশের কার্যকাল। বিদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ বহাল থাকবে।
এই আদেশে আরো বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রি সরবরাহের কাজের জন্যে বিদেশী শ্রমিকেরা আসার অনুমতি পাবেন। পররাষ্ট্রমস্ত্রী অথবা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী অথবা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ জাতীয় স্বার্থে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যুর অনুমতি দিতে পারবেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন