এসাইলামের আবেদন না মঞ্জুর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার সংবাদ জেনেই ৩৫ দিন আগে অনশন শুরু করেছেন বাংলাদেশি মাহবুব আহমেদ-বেগম। টেক্সাস স্টেটের হিউস্টন সিটির কনরোতে মন্টগোমারী প্রসেসিং সেন্টারে মাহবুবকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে ২২ জুলাই থেকে তার নাকে নল ঢুকিয়ে তরল খাদ্য পেটে প্রবেশ করিয়ে।
উল্লেখ্য, দালালকে প্রায় ২৮ লাখ টাকা প্রদানের পর বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য-ব্রাজিল পাড়ি দিয়ে মেক্সিকোতে কদিনের আস্তানা গেড়েছিলেন নোয়াখালীর সন্তান মাহবুব। এরপর দালাল তাকে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত পাড়ি দেয়ার পরামর্শ দিয়ে সিটকে পড়েছে। সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে টেক্সাসে ঢুকেই অভিবাসন দফতরের লোকজনের কাছে আত্মসমর্পণ করেন মাহবুব। একইসাথে এসাইলাম প্রার্থনা করেছেন বলে ডিটেনশন সেন্টারের কর্মকর্তারা জানান। তবে সেই আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি।
এজন্যে মাহবুব আমরণ অনশন শুরু করেছেন। এর আগে ইমিগ্রেশন কোর্টে শুনানির সময় মাহবুব আদালতে বলেছেন, দেশে পাঠিয়ে দিলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং এলাকার সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলবে। তার চেয়ে এখানে অনশন করে মরে যাওয়াই উত্তম। মাহবুবের অনড় অবস্থানে ইমিগ্রেশন জজের হৃদয় না গললেও তার শারীরিক অবস্থা শোচনীয় দেখে ডিটেনশন সেন্টারের চিকিৎসক ড. উচেন্না ওরাজুলিক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালতকে তিনি অবহিত করেন, মাহবুবের ওজন কমেছে বেশ কয়েক পাউন্ড। শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় নিঃশ্বাস বন্ধ হতে পারে। এমন তথ্য জেনে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের অনুরোধে টেক্সাস সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টের জজ এ্যান্ড্রু হ্যানেন গত বুধবার মাহবুবকে জোরপূর্বক খাদ্য খাওয়ানোর অনুমতি দিয়েছেন।
এদিকে, ডিটেনশন সেন্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এবং অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, অনশনরত অবস্থায় পরপর দু’দফা করোনা টেস্ট হয় মাহবুবের। প্রথম বার পজিটিভ এবং দ্বিতীয়বার নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। সর্বশেষ, গত সপ্তাহে আবারো টেস্ট করা হয়েছে। রেজাল্ট এখনও আসেনি।
ড. উচেন্না ওরাজুলিক শুক্রবার জানান, কোন কিছু না খেয়ে একজন মানুষ ৪০ দিনের বেশি বাঁচতে পারে না। মাহবুবকে জোর করে যা খাওয়ানো হচ্ছে, সেটি বেঁচে থাকার জন্যে যথেষ্ঠ নয়। তাই তার ব্যাপারে গভীরভাবে ভাবার অবকাশ রয়েছে। বিচারককে মাহবুব জানিয়েছেন, আমি শুধু একবারমাত্র সুযোগ চাচ্ছি এই দেশে অবস্থানের। আর কিছুই নয়।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের এটর্নি রিচার্ড কিনচেলো আদালতকে বলেছেন, মাহবুবের বিরুদ্ধে জারিকৃত বহিষ্কারাদেশ কবে বাস্তবায়িত হবে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এ ব্যাপারে ইউএস ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কস্টিমস এনফোর্সমেন্টের সাথে যোগাযোগ করলে শুক্রবার তারা অস্বীকার করেছেন ব্যক্তি বিশেষের বিস্তারিত তথ্য অবহিত করতে।
প্রসঙ্গত, মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের পরই গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশিদের সাধারণত টেক্সাসের বিভিন্ন ডিটেনশেন সেন্টারে রাখা হয়। বছর দুয়েক আগে হিউস্টন, আলপ্যাসো প্রভৃতি ডিটেনশন সেন্টারে শতাধিক বাংলাদেশি অনশন শুরু করেছিলেন। এক পর্যায়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যস্থতায় তারা সকলেই প্যারলে মুক্তিলাভ করেছেন। এরপর শিখ সম্প্রদায়ের কয়েকশত বন্দি অনশনে গেলে তারাও জামিনে মুক্তিলাভ করেছেন। কিন্তু মাহবুবের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সদয় না হয়ে নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করেছেন বলেই মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন।
একইসাথে নিউ মেক্সিকো এবং আলাবামা ডিটেনশন সেন্টারে দক্ষিণ এশিয়ার ২৪ জন অনশন শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। সকলেই বছরাধিককাল যাবত এসব ডিটেনশন সেন্টারে মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন।
উল্লেখ্য, মাহবুব নিজেকে বিএনপির সংগঠক হিসেবে দাবি করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেও প্রাথমিক শুনানিতে তিনি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে কনভিন্স করতে সক্ষম হননি যে, দেশে ফিরিয়ে দিলেই প্রতিপক্ষের নির্যাতনে তার প্রাণ যাবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা