অভিভাবকেরা ভয়ংকর এক দুশ্চিন্তায় থাকলেও শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীরা স্কুল প্রাঙ্গনে ঢুকেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। টানা ১৮ মাসের স্বেচ্ছাবন্দিত্ব থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর সোমবার নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে ক্লাস করার সুযোগ পেল শিক্ষার্থীরা। এ এক মহামুক্তির দিন ছিল ১০ লাখের অধিক শিক্ষার্থীর জন্যে। এমনকি, চার বছর বয়েসী শিশুরাও উৎফুল্ল। অথচ তারাও এই প্রথম প্রি-কে ক্লাসে যোগদান করলো। আগের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও নিজ বাসায় অবরুদ্ধ থাকার ঘটনায় কোমলমতি শিশুরাও বিতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিল।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন এলমহার্স্ট হাসপাতালের সন্নিকটে ‘স্টার-প্রি কে’ স্কুৃল শেষে আলিশা খান (৪) তার মা-বাবার কাছে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে, ‘মাত্র দু’ঘণ্টা ছিলাম ক্লাসরুমে। এরই মধ্যে ৮/৯ জন বান্ধবী জুটেছে। খুব মজা হবে কাল স্কুলে গেলে। একই অভিজ্ঞতা বিবৃত করেছে অনাবিল আনন্দে উদ্ভাসিত আরভিন খান (৪)। ওরা কাজিন। ওদের মা-বাবারা এক ধরনের দুশ্চিন্তায় থাকলেও সন্তানের উচ্ছ্বাসে তারাও অভিভূত। একই পরিস্থিতি সবগুলো পাবলিক স্কুলেই দেখা গেছে। হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সকলেই করোনার টিকা নেয়ায় ক্লাসে ফেরার আনন্দের মাত্রা ছিল অপরিসীম। তবে শিক্ষার্থীসহ সকল শিক্ষক-কর্মচারি মাস্ক পরিহিত ছিলেন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ক্লাস নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি অভিভাবকের অনেকেই সন্তানের জন্যে বিচলিত। ডেল্টা ভাইরাসের প্রকোপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় অনূর্ধ্ব ১২ বছরের সন্তানকে ক্লাসে যেতে গররাজি ছিলেন প্রায় সকলেই। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি এবং শিশুদের একাকীত্ব ঘুচানোর অভিপ্রায়ে ক্লাসে যেতে বারণ করেননি বলে উল্লেখ করলেন আলতাফ হোসেন। জ্যাকসন হাইটসের কামাল মাহমুদ এবং এলমহার্স্টের আলিম খান আকাশও ভীষন টেনশনে স্কুলগামী সন্তানের জন্যে। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো স্কুল খোলার পক্ষে রয়েছেন সবসময়। যদিও অনেক স্কুল ডিস্ট্রিক্টেই এখনও পুরোদমে ক্লাস করা সম্ভব হয়নি ডেল্টার আতংকে। করোনার শুরুতে নিউইয়র্ক সিটিতে যে ভয়ংকর অবস্থা তৈরী হয়েছিল, তার কথা কেউই না ভুললেও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে ক্লাসে ফিরে যায়-এ দাবি ছিল সর্বমহলে। সে কারণেই সিটি মেয়রও নিজের অবস্থানকে সরব রাখতে বাধ্য হয়েছেন। তবে প্রথমদিনে কতজন শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। গত বছর অবশ্যই নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলসমূহের ৬ লাখ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণের আবেদন জানিয়েছিল। এমনি অবস্থায় খুবই নগন্যসংখ্যক অভিভাবক পুনরায় স্কুলসমূহের চ্যান্সেলরের সমীপে আবেদন জানিয়েছেন দূরশিক্ষণ পদ্ধতি আবারো চালুর জন্যে।
অপরদিকে, স্কুলসমূহের চ্যান্সেলর মেইশা পোর্টার বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত গভীর মনিটরিংয়ে রাখা হবে শিক্ষার্থীদেরকে। এরপরও যদি কেউ ক্লাসে না আসে তাহলে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
সোমবারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই সিটির ১৮০০ পাবলিক স্কুলের ৮২% শিক্ষার্থীই ক্লাসে ফিরেছে। সচরাচর নতুন শিক্ষাবর্ষে উপস্থিতির হার ছিল ৯০%।
ক্লাস শুরু উপলক্ষে সিটি মেয়র বলেন, সত্যি আমিও অভিূংত। এটি স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। একেবারেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া একটি বিষাদময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পরিক্রমা। পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এই ক্লাসে ফেরার ঘটনাটি সকলের জন্যেই অদ্ভূত একটি ব্যাপার হয়ে উঠেছিল।
এদিকে, সিডিসির পরিচালক ড. রোচেলে ওঢালেনস্কি ১৩ সেপ্টেম্বর সোমবার বলেছেন, বছর শেষেই ১২ বছরের কম বয়সী শিশুরাও টিকার আওতায় আসতে পারে। এ নিয়ে গবেষণা চলছে। টিকা উৎপাদনকারিরা (ফাইজার/বায়ো এনটেক/মডার্না) শীঘ্রই এফডিএর কাছে এ ব্যাপারে আবেদন জানাতে পারে। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, টিকা গ্রহণকারির চেয়ে টিকা না নেয়া ব্যক্তির করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি ১১গুণ বেশি। তাই ১২ বছরের কম বয়েসীরাও টিকা নিলে করোনার ভীতি অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন