৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ২৩:৫৬

তথ্য গোপন রেখে ‘ওমিক্রন’ নিয়ে দম্পতির কোরিয়ায় প্রবেশ

মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া

তথ্য গোপন রেখে ‘ওমিক্রন’ নিয়ে দম্পতির কোরিয়ায় প্রবেশ

প্রতীকী ছবি

দেশ উন্নত হলেও দিন দিন যেন করোনা এবং নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’র কাছে অসহায়ত্ব বরণ করছে দক্ষিণ কোরিয়া। গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা বিশ্বের কাছে সফল দেশ হিসেবে আখ্যায়িত দেশটিতে এখন প্রতিদিনই রেকর্ড সংখ্যক করোনা সংক্রমিত হচ্ছে।

দেশটিতে ৮০ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া পরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সাথে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনও।

দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (কেডিসিডি) তথ্য অনুযায়ী, কোরিয়ায় করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে শনিবার ৪ হাজার ৩৫২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়, যা দেশটিতে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত এবং একদিনে সর্বোচ্চ ৭০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, ওমিক্রনে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। কোরিয়াতে শুরুর দিকে যেভাবে করোনা ছড়িয়েছিল, ঠিক একই পদ্ধতিতে ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের তাণ্ডব।

প্রথমে নাইজেরিয়া থেকে আগত উজবেকিস্তানী এক যাজক ও তার স্ত্রী থেকে প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়ায় ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন তারা। প্রতি বছর নিয়মিতভাবে নাইজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত খ্রিস্টানদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা। চার্চে দায়িত্বশীল এই যাজক জন্মসূত্রে কোরিয়ার নাগরিক। তারা মিথ্যা বলেছিলেন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক জিজ্ঞাসাবাদের সময় তথ্য গোপন করে কোরিয়াতে প্রবেশ করেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

দ্য কোরিয়ান হেরাল্ডের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৪ নভেম্বর নাইজেরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আসার পর এক দম্পতির ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এই দম্পতি ইনচন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের এক বন্ধুর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সরাসরি বাড়িতে যান। টানা ছয় দিনে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই ঘুরে বেড়ান। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং সহকর্মীসহ ৮৭ জনের সংস্পর্শে চলে যান এই দম্পতি।

স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভ্যারিয়েন্টের সাথে জড়িত একটি সম্ভাব্য সম্প্রদায়ের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বর্তমানে ৪০০ জনেরও বেশি লোকের ওপর পরীক্ষা চলছে যারা সিউল থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে ইনচন সেই গির্জায় যেখানে সংক্রামিত ব্যক্তি পরিষেবায় যোগ দিয়েছিলেন।

কেডিসিডির কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের কিশোর ছেলেরও করোনা ধরা পড়েছে। তবে তার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের পরীক্ষার ফল এখনো জানানো হয়নি। আবার ওই স্ত্রীর শাশুড়িকে সন্দেহভাজন ওমিক্রন টেস্ট করা হয়েছে, তারও তদন্ত চলছে।

কোরিয়ার চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ওমিক্রন সম্পর্কে শঙ্কা প্রকাশ করার পর পরই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেড়েছে দেশটিতে। করোনার এ ধরনের বিস্তার ঠেকাতে ইতিমধ্যে কোরিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে আবার ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে বলছে, যে এখন পর্যন্ত ৪০টি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছে, মাত্র দুই দিন আগে যা ২৩টি দেশে সীমাবদ্ধ ছিল।

কোরিয়াতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯০৭ জন। শনিবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭০ জন মারা যায়, যা মহামারি শুরু থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা বলে জানিয়েছে কেসিডিসি। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮০৯জন। তবে দেশটিতে এর প্রাদুর্ভাব অভূতপূর্ব মাত্রায় খারাপের দিকে যাচ্ছে। কোরিয়াস্থ সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে চলাচলের জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ কোরিয়ার সকল সামাজিক কমিউনিটির নেতারা।

গত ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী ২ সপ্তাহ কোরিয়া প্রবেশের ক্ষেত্রে সকল দেশের নাগরিকদের ভ্যাকসিন গ্রহণ নিশ্চিত থাকলেও বাধ্যতামূলক ১০ দিনের কোয়ারান্টাইন করতে হবে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার রোধে আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী সিউলে সর্বোচ্চ ছয়জন এবং অন্যান্য সিটিতে আটজনের বেশি জনসমাগম করতে নিষেধ করে নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির সরকার। ক্যাফে-রেস্তোরাঁ, ক্র্যাম, স্কুল, সিনেমা থিয়েটার, লাইব্রেরি, জাদুঘর এবং জিমসহ উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে দর্শকদের প্রবেশে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখাতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর