জাতীয় দৈনিকে এক সময়কার ডাকসাইটে ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, পেশাদার সাংবাদিক মো. মাহাবুবুর রহমান এখন পেশাদার আইনজীবী। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের এই আইনজীবী ঐতিহ্যবাহী লিংকনস্ ইন থেকে বার-এট-ল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগেই বার স্ট্যান্ডার্স বোর্ড তাকে প্রাকটিসিং ব্যারিস্টার হিসেবে অনুমোদন দেয়। তিনি দীর্ঘদিন সলিসিটর অ্যাডভোকেট হিসেবে ইউকের উচ্চপর্যায়ের আদালতে আইন পেশা চর্চা করছেন। ইতোমধ্যে নিউ ওয়াক চেম্বার্স নামে একটি ব্যারিস্টারি চেম্বারে টেনান্সি পেয়েছেন।
ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান মেধা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ইউকের আইনাঙ্গনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন, যা শুধু তার জন্য নয়, বরং আইন অঙ্গনে তার সহকর্মী, বাংলাদেশি কমিউনিটি ও আইনের শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি বড় অনুপ্রেরণা। তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, এই প্রত্যাশা করেছেন তার সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।
মাহাবুবুর রহমানের প্রাকটিসিং ব্যারিস্টার হওয়ার গল্পটা অনেকটা ভিন্ন আমেজের। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক থেকে আইন পেশায় যুক্ত হন ২০১৫ সালে। প্রথমে তিনি ইউকের সিটিজেন অ্যাডভাইস বুয়ারোতে অ্যাডমিনিসট্রেটর হিসেবে কাজ করেন। এরপর লন্ডনের জেএস সলিসিটর ফার্মে প্যারা লিগাল হিসেবে কাজ করেন। তিনি লন্ডনের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যারিস্টার চেম্বার গার্ডেন কোর্ট মেম্বার্সে খ্যাতিমান বিচারপতি ও ব্যারিস্টার মার্ক সায়েমসের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। কনসালটেন্ট সলিসিটর হিসেবে কাজ করেছেন আরেকটি স্বনামধন্য সলিসিটর ফার্ম ডিপলট সলিসিটর্সে।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার, অ্যাসাইলাম ও ইমিগ্রেশন এবং মানি লন্ডারিং বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর বৃটেনে ওয়েস্ট মিনিস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা ইন ল' এবং লিগ্যাল প্রাকটিস কোর্স সম্পন্ন করেন। বিপিপি ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল আইনের ওপর হাইয়ার রাইটস অব অডিয়েন্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি ২০১৮ সালে সুইডেনের স্টক হোম ইউনিভার্সিটি এবং হেগের আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টের যৌথ প্রজেক্টে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টের কার্যবিধি এবং সমকালীন বিচারকার্যের উপরে গবেষণা সম্পন্ন করেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছেন প্রেস ইনস্টিটউট অব বাংলাদেশ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ পাঠ গ্রহণ করেন ইউনিভার্সিটি অব আর্টস লন্ডন থেকে। ওই কোর্স সম্পন্ন করেই তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় ২০০১ সালে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর তিনি বাংলাদেশের দৈনিক আমার দেশ, বাংলাবাজার পত্রিকা, ইউকের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্যা গার্ডিয়ান এবং সর্বশেষ বিশ্বখ্যাত রয়টার্স নিউজে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বেশকিছু পুরস্কার পেয়েছেন, তেমনি অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখতে গিয়ে হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ সম্মেলন কভার করতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুয়া সাউথ সাউথ পুরস্কারের তথ্য ফাঁস করে তিনি আলোচিত হন এবং জীবনের হুমকির মুখোমুখি হন। এরপর তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।
আইন পেশা ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বৃটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএসের মার্কার হিসেবে কাজ করেছেন কয়েকবছর। এছাড়া লন্ডনের বিখ্যাত কিংস কলেজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে এক্সাম সেকশনে কাজ করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছিন্নমূল মানুষের জন্য কাজ করেছেন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান আল খায়ের ফাউন্ডেশনে। তিনি ইউকের খ্যাতিমান চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ব্রেকিং ব্যারিয়ার্সে অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইংল্যান্ড ওন্ড ওয়েলের একজন প্রাকটিসিং সলিসিটর হিসেবে মাহাবুবুর রহমান ২০২১ সাল থেকেই ল' সোসাইটি ও এসআরএর সদস্য। ২০১৮ সাল থেকে তিনি অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস্ ইনের সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউিনয়ন, ইউকের ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য।