প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ কংগ্রেসে পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন নন এমন গ্রিনকার্ডধারী, ওয়ার্ক পারমিটধারী, এইচ-১বি ভিসা, এফ-১ ভিসাধারী এবং অবৈধভাবে বসবাসরতরা নিজ দেশে অর্থ পাঠালে ৫ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে।
প্রস্তাবিত বিলে ট্যাক্সের ক্ষেত্রে কোনও ছাড়-সীমা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, যে কোনও অঙ্কের অর্থ পাঠালেই ট্যাক্স দিতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
১৮ মে রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ বাজেট কমিটি ১১১৬ পাতার নতুন এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। সেখানে বিলটি ১৭-১৬ ভোটে পাস হয়। এর ফলে বহুল আলোচিত বিলটি কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ভোটের পথে একধাপ এগিয়ে গেছে।
বিলটি আইনে পরিণত হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণের ওপর বড় ধরনের একটি ধাক্কা পড়বে বলে অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন। সোনালী এক্সচেঞ্জ, সানম্যান এক্সপ্রেস, স্মৃতি মানি ট্র্যান্সফার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ব্যবসা-বিনিয়োগ এবং স্বজনের কাছে নিয়মিত অর্থ প্রেরণকারিগণের ৮০% হলেন নন-সিটিজেন অর্থাৎ তারা যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী অথবা ওয়ার্ক পারমিটধারী এবং কাগজপত্রহীন প্রবাসী। কঠোর শ্রমে অর্জিত অর্থের বড় একটি অংশ তারা স্বজনের কাছে পাঠিয়ে আসছেন। প্রেরিত অর্থের ওপর বাংলাদেশ সরকার যখোন আড়াই পার্সেন্ট হারে বোনাস দিচ্ছে, সে সময়ে ৫% হারে ট্যাক্স ধার্যের এই প্রস্তাবকে গরিবের পেটে লাথি মারার সামিল বলে মন্তব্য করছেন মানবাধিকার ও অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সরব ড. পার্থ ব্যানার্জি। ড. পাার্থ বলেছেন, ভারত, বাংলাদেশ, মেক্সিকো, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপালের জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে মার্কিন প্রবাসীদের রেমিট্যান্স। তার ওপর যদি ৫% হারে ট্রাম্পের এই ট্যাক্স আরোপের এই প্রস্তাব আইনে পরিণত হয় তাহলে গন্তব্যে অর্থের পরিমাণ কমবে।
স্মৃতি মানি রেমিট্যান্সের সিইও ড. মাহাবুবুর রহমান টুকু জানান, নতুন আইনে শুধু পারিবারিক খরচের জন্য অর্থ পাঠানোর ওপর নয়, শেয়ার বিক্রি বা অন্য বিনিয়োগের লাভের অর্থও এই ট্যাক্সের আওতায় আসবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিদেশিদের জন্য দেশে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
অপরদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি হচ্ছে, প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ উপার্জন করে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিজ দেশে পাঠানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। এই প্রবাহ বন্ধ করা এবং অভ্যন্তরীন রাজস্ব বাড়াতে রেমিটেন্সে কর বসানো দরকার।
এতে অভিবাসন ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে দাবি ট্রাম্পপন্থিদের। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও আছে। আর তা হল, দেশের ভেতরের ট্যাক্স প্রদানকারীদের সন্তুষ্ট করা এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের বার্তা দেওয়া।
রিপাবলিকানদের সমর্থন পাওয়া প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে ওয়াশিংটনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা বিলটির বিরোধিতা করছেন। ট্রাম্পের নিজ দলের মধ্যেও এই বিল নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। গত শুক্রবার বাজেট কমিটির কট্টরপন্থি একটি অংশ ট্রাম্প ও দলীয় নেতৃত্বের ইচ্ছার বিরোধিতা করে বিলটি আটকে দেয়। তবে রোববারের ভোটে এটি অল্প ব্যবধানে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে পূর্ণাঙ্গ ভোটে ওঠার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে।
‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ কংগ্রেসে পাশ হলে কমপক্ষে ৯০ লাখ গরিব আমেরিকান চিকিৎসা-সহায়তার সুযোগ হারাবে বলে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিলের সমালোচনাকারি ডেমক্র্যাটরা দাবি করছেন। এর বাইরে আরো কয়েক লাখ মধ্যবিত্ত আমেরিকানকে চিকিৎসার জন্যে গুণতে হবে মোটা অংকের অর্থ। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যাকে ‘বিগ বিউটিফুল’ বলে চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন সেটি মূলত: কঠোর পরিশ্রমী আমেরিকানদের পেটে লাথি দেয়ার সামিল বলে সর্বমহলে আপত্তি উঠেছে। আর এই আপত্তিকারির মধ্যে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির অনেক কংগ্রেসম্যানও আছেন। কারণ, এটি আইনে পরিণত হলে সামনের বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ব্যালটে তার বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল