শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মমর বুকফটোগ্রাফি

পান্থ আফজাল

মমর বুকফটোগ্রাফি

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বই তাকে খুব করে টানে। তার লেখার মুগ্ধতায় আটকে পড়া সেই ক্লাস সিক্স থেকেই। তারপর তাকে আর বই পড়ার গন্ডিতে আবদ্ধ রাখা যায়নি। হুমায়ূনের যে কোনো বই বাজারে এলে তা যেন সংগ্রহে রাখা চাই ছোট্ট হিমুপ্রিয় কিশোরীর। সেই থেকে বই কেনার মোহে বুঁদ হওয়া মমতাজ জাহান মমর। যে কিনা ফেসবুকে পরিচিত হিমুপ্রিয় মম নামে। রাজবাড়ী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সে। রাজবাড়ীর প্রিয়প্রাঙ্গণ শিশুরাজ্যের চৌকাঠ পেরুনোর পর থেকেই বই পড়া ও বই নিয়ে যাবতীয় আগ্রহ বেড়ে যায় মমর। ছোট্ট বয়সে পড়াশোনা যতটা করেছেন, তার থেকে বেশি করেছেন খাতায় আঁকাআঁকি। সেসময় তার ছবি আঁকার সঙ্গী ছিলেন প্রিয় বন্ধু ফারিয়া, অহনা ও গিফ। তখন মমর মন পড়ে থাকত ফুল, পাখি, ফল আর সবুজ প্রকৃতি নিজের তুলিতে আঁকার আনন্দে। স্কুলে বা বাড়িতে অবসরে মম কাঠ পেনসিল ও আর রঙের পসরা সাজিয়ে বসে যেত ছবি আঁকায়। ছবিতে ফুটে উঠত গ্রাম, প্রকৃতি, দেশ ও সংগ্রামী মানুষ। এই ছবি আঁকাআঁকিতে মমর সাফল্যের ঝুলিতে জমা হয়েছে অনেক পুরস্কার। পুরস্কার হিসেবে কখনো পেয়েছেন রং পেনসিল, জ্যামিতি বক্স, টিফিন বক্স আবার কখনো  পেয়েছেন মজার মজার সব বই। যে বইগুলো ছিল তার বেশি আগ্রহের বিষয়। বই পড়া ছিল তার অন্যতম আগ্রহের বিষয়। বয়সের সঙ্গে বেড়েছে বই পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ। বই পড়া ও সংগ্রহে রাখার ইচ্ছা থেকে বই কেনার বাতিক বাড়ে। শুধু বই কেনা নয়, বুকফটোগ্রাফিতেও সে অনন্য। তবে বইয়ের ছবি তোলা শুরু করেছে খুব বেশি দিন হয়নি।  সেটা ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে। ইদানীং ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে অনেক প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে বইয়ের কভার ফটো অর্থাৎ বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি তোলা নিয়ে। সেও প্রায় সময়ই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

হুমায়ূনের ‘হিমুর মধ্যদুপুর’ এবং মালালা ইউসুফজাইয়ের ‘আই এম মালালা’সহ বেশকিছু বইয়ের প্রচ্ছদচিত্রের ছবি তুলে সাফল্যের ঝুড়িতে পুরেছেন পুরস্কার।  মোবাইল ক্যামেরাবন্দি করে চলেছেন নানা ঢংয়ের ছবি। কখনো বুকসেলফে বই রেখে, কখনো সবুজ ঘাসের বুকে বই রেখে আবার বালিশ, বিছানা, সবুজ গাছের সঙ্গে সখ্যতা করে বিভিন্নভাবে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। তাই মমকে বলা যায় বিচিত্র রকমের বুকলাভার! ইদানীং অনেকেরই বইয়ের ছবি তোলা নতুন নেশা, নতুন কিছু। তবে তার বই নিয়ে বাড়াবাড়ি একটু ভিন্নরকম। তার কথায় ‘আমি চাই আমার পছন্দের সব বই সংগ্রহে রাখতে। যা থেকে আমি আমার একটা ছোট্ট লাইব্রেরি করার স্বপ্নের পেছনে ছুটছি। এই একটা ছবি যা আমাকে ২৪ ঘণ্টা অনুপ্রেরণা জোগায়, তা হচ্ছে বইয়ের ছবি। বইয়ের ছবি তোলার মাঝে একটা আনন্দ আছে। আমার তোলা বইয়ের ছবিগুলো যখন সবাই দেখবে, তখন ভালো লাগলে যে কেউ কিনতে আগ্রহী হবে। বইয়ের জগৎ থেকে প্রতিটা মানুষ বই পড়ে যে জ্ঞান পাবে বা বুঝবে-শিখবে, তা কোথাও আর পাবে না। একেকটা বইয়ের স্টোরি একেকরকম। হুমায়ূন স্যারের ৩৫-এর অধিক বই আছে এবং যার সবই পড়েছি। বইয়ের ছবি তোলায় বইয়ের প্রতি অন্য একজন মানুষ আকৃষ্ট হতে পারে। আগ্রহ বাড়তে পারে বইটি পড়ার জন্য। বইয়ের ছবি তোলা দেখে দেখেই শেখা। তুলতে তুলতে আগ্রহ বেড়ে গেছে। তুলতে ভালো লাগে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর