করোনাভাইরাস পৃথিবীতে আঘাত হানার পর থেকে সারা বিশ্বের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্তপ্রায়। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে মানুষের অসহায়ত্বের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। করোনার দুঃসময়ে মানুষের সীমাহীন দুঃখ-গল্পের মাঝে একটুখানি প্রশান্তির পরশ দিতে কাজ করে যাচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি মেহেরপুরের সাহসী তরুণ সাব্বির আহমেদ। পড়াশোনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। মাস্টার্সের এই ছাত্র করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে মানুষের সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় প্রায় তিন মাস ধরে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কিন্তু পথটা মোটেই সহজ ছিল না। ভালো কাজেও আসে মানুষের বাধা। এর শিকার হয়েছেন সাব্বির নিজেও। কাজ করতে গিয়ে যিনি শুনেছেন মানুষের বিভিন্ন কথা। পেয়েছেন পাগলা উপাধি। গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়েই তিনি মাঠে নামেন অসহায় মানুষের জন্য। গত বছর ৭৫ দিনে থেমে গেলেও এবার আর থামেননি তিনি। এ বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষের অসহায়ত্ব দেখে বসে থাকতে পারেননি তিনি। আবারও শুরু করেন সাব্বির। বিশ্বাস করেন মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়াবে। তাই কারও কটুকথা কানে না নিয়ে তিনি তার কাজ চালিয়ে যান।
তার প্রথম উদ্যোগের মধ্যে ছিল মানবতার দেয়ালের আদলে খাদ্যসামগ্রীর ফ্রি দোকান, বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী, সবজি যাবে আপনার বাড়ি, ফ্রি বাজার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, ঈদ উপহার, ইফতার সামগ্রী, মাস্ক বিতরণ, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, জীবাণুনাশক ব্লিচিং পাউডার স্প্রে ইত্যাদি কার্যক্রম।
বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফ্রি বাজার কার্যক্রমের মাধ্যমে পুনরায় তিনি কাজ শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ পরিবারের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাছ, ফল ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ৩০০-৪০০ পরিবারের মাঝে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রথমে নিজের জমানো টিউশনির টাকা দিয়ে সামাজিক কার্যক্রম শুরু করলেও এখন তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও অনেকেই। সহযোগিতার হাত বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অনেকে। আর এলাকাবাসীর দোয়া নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সাব্বির।