একজন মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। এরপর হঠাৎই তাঁর মৃত্যু। এমন সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা নিহতের স্বজনদের। গোসল, দাফন-কাফনসহ বিভিন্ন কাজ কোথায় করবেন, কেমনে করবেন- তা নিয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়তে হয়। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায় থেকে আসা রোগীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তদুপরি স্বজনদের এমন করুণ সময়ে পেছনে ঘুর ঘুর করে দালাল চক্র।
তবে এবার মৃত্যু-পরবর্তী গোসলের চিন্তার অবসান হলো। মৃতদেহের অন্তিম যাত্রার গোসল করানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে শেষ স্পর্শ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মৃত্যুবরণকারী গরিব-অসহায় ও দুস্থদের বিনামূল্যে গোসল এবং কাফনের কাপড় দেওয়া হয় শেষ স্পর্শ নামের এই আধুনিক গোসলখানায়। আর্থিক অসংগতি থাকলে ক্ষেত্রবিশেষ দেওয়া হয় মৃতদেহ বহনে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চমেক হাসপাতালের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশেই গত ১৪ আগস্ট এটি চালু করা হয়। শেষ স্পর্শ যাত্রায় সহযোগিতা করে চমেক হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়। এর মাধ্যমে মৃত্যুবরণকারী স্বজনদের দুর্ভোগ-ভোগান্তির অবসান ঘটতে যাচ্ছে। গোসলখানার সেবা পেতে হলে নির্ধারিত নম্বরে কল করে সেবা গ্রহণ করতে যাবে।
চমেক হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সমাজসেবা অফিসার অভিজিৎ সাহা বলেন, গরিব-অসহায় মানুষের মৃতদেহের গোসল ও কাফন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতো। অথচ ওই সময় নিহতের স্বজনের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। তখনই মানুষকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এখন শেষ স্পর্শের মতো আধুনিক গোসলখানা চালুর মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হলো। ইতোমধ্যে অনেকেই এর সুফল ভোগ করছেন।
আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, গরিব-অসহায় ও দুস্থ রোগীর মৃত্যুর পর গোসল ও কাফন একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তখন মৃত ব্যক্তির স্বজনরা দিশাহারা হয়ে পড়েন। না জানার কারণে অনেককে বাড়তি টাকাও খরচ করতে হয়। আমরা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ সমস্যা নিরসন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন আধুনিক গোসলখানার শেষ স্পর্শের মাধ্যমে বিনামূল্যে গোসল ও কাফনের কাপড় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আছে প্রয়োজনীয় আধুনিক উপকরণ। এটি আমাদের একটি মানবিক উদ্যোগ। জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট থেকে চালু হওয়া শেষ স্পর্শটিতে এখন দিনে একটি বা দুটি মৃতদেহ গোসল ও কাফনের ব্যবস্থা করতে হয়। গোসল দিতে পুরুষের জন্য পুরুষ আর মহিলার জন্য অভিজ্ঞ মহিলা আছেন। বর্তমানে দুজন পুরুষ ও দুজন মহিলা দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরীর মধ্যে গরিব-দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থাও আছে।