মানুষের ভবিষ্যৎ এক সময় বিলুপ্তির হুমকির মুখে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায়, বিজ্ঞানীরা একটি বৈপ্লবিক উদ্যোগ নিয়েছেন, যেখানে মানুষের জিনগত সব তথ্য একটি বিশেষ স্ফটিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা এই প্রকল্পে ‘৫ডি মেমোরি ক্রিস্টাল’ নামক প্রযুক্তিতে পুরো মানব জিনোমকে সঞ্চিত করেছেন। সিএনএন জানায়, এ জিনোম হলো জীবের সম্পূর্ণ জিনগত নির্দেশাবলির একটি সেট, যা জীব সৃষ্টির পাশাপাশি প্রজনন ও বংশগতির জন্য অপরিহার্য।
এই মেমোরি ক্রিস্টাল মূলত বিশেষ ধরনের স্ফটিক, যা তথ্য সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্টোইলেকট্রনিকস রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। তাদের মতে, এই স্ফটিকে কেবল মানব জিনোম নয়, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিভিন্ন প্রজাতির জিনগত তথ্যও সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দল জানিয়েছে, এই স্ফটিকে ৩৬০ টেরাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে, যা কয়েক শ কোটি বছর টিকে থাকতে সক্ষম। এ স্ফটিক চরম প্রতিকূল পরিবেশেও দীর্ঘকাল ধরে স্থিতিশীল থাকবে। এটি তীব্র ঠান্ডা, অগ্নি, মহাজাগতিক বিকিরণ ও হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এমনকি ২০১৪ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে একে সবচেয়ে টেকসই ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণের উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
৫ডি মেমোরি ক্রিস্টালের নামকরণ করা হয়েছে তার তথ্য সংরক্ষণের ন্যানো অবকাঠামোর পাঁচটি ভিন্ন মাত্রার ওপর ভিত্তি করে। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার কাজানস্কি উল্লেখ করেন, এই প্রযুক্তি শুধু মানবজাতির জিনগত তথ্য নয়, ভবিষ্যতে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সম্পর্কিত জটিল তথ্য সংরক্ষণের এক চিরন্তন ভান্ডার হিসেবে কাজ করবে।
তবে এখন বিজ্ঞানীদের জন্য মূল প্রশ্ন হলো—ভবিষ্যতে কে বা কারা এই সংরক্ষিত তথ্য উদ্ধার করবে? বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যে কোনো বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রাণী বা উন্নত যন্ত্র ভবিষ্যতে এসব তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। যদিও এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সূত্র পাওয়া যায়নি, তবে স্ফটিকটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতের যে কেউ সহজেই এর মধ্যকার তথ্য শনাক্ত করতে পারে।
মানব জাতির জিনগত তথ্যসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংবলিত এই স্ফটিকটি অস্ট্রিয়ার একটি গুহায় অবস্থিত ‘মেমোরি অব ম্যানকাইন্ড’ সংগ্রহশালায় রাখা হয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল