বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাত স্বাভাবিক

জাফর আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এসআইবিএল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাত স্বাভাবিক

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও সিইও জাফর আলম বলেছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের অবস্থা এখন স্বাভাবিক। এ সেক্টরে বিরাজমান সমস্যা সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মিলে নিরসনের চেষ্টা করছে। কভিডের সময় সব ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল ছিল। মানুষ তখন অনেক কষ্টে বাঁচার চেষ্টা করেছে। সে অবস্থা উত্তরণ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এসব দেশ থেকে আমাদের জ্বালানি, সার ও গম আমদানি করতে হয়। সরকার পরিস্থিতি অনুধাবন করে এসব বিষয়ে আগাম সতর্কতা নেওয়ায় আমরা পাশের দেশগুলোর তুলনায় অনেক ভালো আছি। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনীতি সচল রাখতে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে গুরুত্বারোপ করেছে। ইতোমধ্যে আসন্ন রমজানের জন্য তেল, চিনি, ছোলা, খেজুর, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী আমদানির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রমজানে যাতে কোনো পণ্যের সমস্যা না হয়, তার জন্য এসআইবিএল নিয়মিত এলসি খুলছে। বাজারে যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে, এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। এ ছাড়া আমাদের রপ্তানি বেড়েছে, রেমিট্যান্স আহরণও বেড়েছে। গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। আমাদের পজিটিভ গ্রোথ অব্যাহত থাকলে আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বিদ্যমান সংকট কেটে যাবে। ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

জাফর আলম বলেন, ব্যাংক খাতের সংকট নিয়ে অনেকেই একটু অগ্রিম কথা বলেছেন। বলা হলো, আমাদের দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। আমাদের কিন্তু তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আবার গুজব ছড়ানো হলো, ব্যাংকে টাকা নেই। এমন প্রচারে মানুষের ভিতর সাময়িক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যাংক খাত কাটিয়ে উঠেছে। এখন টাকা জমা বাড়ছে ব্যাংকে। কোনো ব্যাংক টাকা নেই বলে চেক ফেরত দিয়েছে, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। আমাদের ব্যাংকে কিন্তু টাকা তোলার চেয়ে জমা হচ্ছে বেশি।

আমাদের রপ্তানি বেড়েছে, রেমিট্যান্স আহরণও বেড়েছে। গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। আমাদের পজিটিভ গ্রোথ অব্যাহত থাকলে আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বিদ্যমান সংকট কেটে যাবে। ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। আমার ৩১ বছরের কর্মজীবনে সব সময় চিন্তা করেছি, সাধারণ মানুষের উপকারে কিছু করা যায় কি না। তাদের জীবনমান কীভাবে পরিবর্তন করা যায়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক জীবনঘনিষ্ঠ প্রডাক্ট নিয়ে এসেছি আমরা।

জাফর আলম বলেন, আমরা শহর এলাকায় বসবাসরতদের জন্য একটি বিনিয়োগ প্রডাক্ট চালু করেছি। যেখানে ছাদবাগান করতে আগ্রহী একজন ব্যক্তি কোনো প্রকার জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ সুবিধা পাচ্ছেন। ব্যাংকটি এসআইবিএল শিক্ষা, এসআইবিএল বিবাহ ও এসআইবিএল স্বাস্থ্য নামে তিনটি আমানত প্রডাক্ট চালু করেছে। যেখানে গ্রাহক একের ভিতর দুটি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এটি যেমন সঞ্চয় স্কিম, তেমনি বিনিয়োগ প্রডাক্ট। এ স্কিমের অধীনে একজন গ্রাহক দুই বছর পর ব্যাংকে তার জমাকৃত অর্থের দ্বিগুণ বিনিয়োগ (ঋণ) সুবিধা পাবেন।

তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য সম্প্রতি আমরা একটি পণ্য চালু করেছি। যার অধীনে প্রবীণ নাগরিকরা ব্যাংকে আমানত রাখতে পারবেন; যাতে মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা পাবেন। এ প্রোডাক্টের অধীনে আমানতকারীরা তুলনামূলক অতিরিক্ত মুনাফা পাবেন। শুধু তাই নয়, এ ক্যাটাগরির আমানতকারীরা ঢাকার গ্রিন রোডে অবস্থিত এসআইবিএল ফাউন্ডেশন হাসপাতাল থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা সুবিধাও পাবেন। প্রয়োজনে আমরা ঢাকা সিটির মধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই সিনিয়র নাগরিকদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করব।

এসআইবিএল এমডি অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রবাসী ডিপোজিট স্কিম নামে আরেকটি নতুন প্রডাক্ট চালুর কথা বলেন। এ স্কিমের গ্রাহকরা এয়ারপোর্ট থেকে বাসস্টেশন বা ট্রেনস্টেশন বা সিটি করপোরেশনের বাসাবাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা পাবেন যদি তাদের হিসাবে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা স্থিতি থাকে ও এসআইবিএলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন। তদুপরি প্রবাসীরা হাসপাতালে সর্বোচ্চ কমিশন পাবেন। এসআইবিএল শীর্ষ নির্বাহী হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ‘হকার্স আমানত ও পুনর্বাসন স্কিম’ সম্পর্কে বলেন, হকার্স ভাইদের জীবনমান উন্নত ও স্থায়ী দোকানে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আমানত ও বিনিয়োগ প্রডাক্ট চালু হয়েছে। যারা এ অ্যাকাউন্ট করবেন তারা চাইলে দোকান কেনা, লিজ বা ভাড়ার জন্য জমার অনুপাতে বিনিয়োগ দেবে ব্যাংক। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে সেবার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে সারা দেশে ব্যাংক তার নেটওয়ার্ক এবং কার্যক্রম সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে ব্যাংকটির শাখা সংখ্যা ১৭৯, উপশাখা ১৬৩ এবং এজেন্টের সংখ্যা ৩৫০টি হলেও বছর শেষে ৫০০টিতে পৌঁছবে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর