শিরোনাম
শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিরপুরে আজ গেইল ধামাকা

মেজবাহ্-উল-হক

মিরপুরে আজ গেইল ধামাকা

রংপুর রাইডার্সের দুই ভরসা ম্যাককালাম ও গেইল

একাডেমি মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ক্রিস গেইল। হাসতে হাসতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। এমন সময় একটি বল উড়ে এসে পাশের দেয়ালে আঘাত করে। সবার মাঝেই ক্ষণিকের আতঙ্ক! গেইলও ভয়ে মাথা নিচু করেছিলেন। তারপর মাথা ঘুরিয়ে হাস্যোজ্জ্বল গেইল হুমকির সুরে বললেন, কে রে?

 নেটে তখন ব্যাটিং প্রাকটিস করছিলেন, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। বলটি তিনিই সজোরে হাঁকিয়ে ছিলেন। ম্যাচে এই শট খেললে বল গ্যালারিতে গিয়ে আঁচড়ে পড়ত। এই ম্যাককালামই আজ গেইলের সঙ্গে রংপুর রাইডার্সের ইনিংস ওপেন করবেন।

এই ঘটনার পরই গেইলকে প্রশ্ন করা হলো, ম্যাককালামের সঙ্গে ওপেন করতে রোমাঞ্চিত কিনা? ক্যারিবীয় কিংবদন্তি সেই ট্রেডমার্ক হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমি জানি ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কতটা ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান! আইপিএলে আমরা এক সঙ্গে ওপেন করেছিলাম। এখানেও এক সঙ্গে ব্যাটিং করব। দুজনে এক সঙ্গে জুটি হয়ে খেলতে পারব। আমাদের দুজনই এই দলে প্রথমবারের মতো খেলছি। তবে আমরা দুজনেই অভিজ্ঞ। আমাদের ওপর সবার অনেক প্রত্যাশা। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব। ’

গেইল ও ম্যাককালাম দুজনেই আইপিএলে দুই সেরা ইনিংসের মালিক। ২০০৮ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ১৫৮ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেছিলেন ম্যাককালাম। ৫ বছর সেটি ছিল আইপিএলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। কিন্তু ২০১৩ সালে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন। খেলেন মাত্র ৬৬ বলে ১৭৫ রানের সেই সাইক্লোন ইনিংসটি। এই দুই ক্রিকেটারই আজ রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে মাঠে নামছেন। প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

পয়েন্ট টেবিলে মাশরাফির রংপুর রাইডার্স মোটেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। তিন খেলায় তাদের জয় মাত্র একটি। টানা দুই হার। তবে প্রথম তিন ম্যাচে রংপুর তাদের সেরা ক্রিকেটারদের দলে পায়নি। গেইল ও ম্যাককালামকে পেয়ে রংপুর রাইডার্স যেন চাঁদের হাট হয়ে গেছে। একাদশে কাকে রেখে কাকে খেলাবেন তা নিয়ে হয়তো মধুর সমস্যায় পড়ে গেছেন কোচ টম মুডি।

তবে আজকের ম্যাচে রংপুরের একাদশে গেইল, ম্যাককালাম ও থিসারা পেরেরার সঙ্গে দেখা যাবে মালিঙ্গা ও রবি বোপারাকে। আর স্থানীয়দের মধ্যে থাকবেন মাশরাফি, রুবেল, মিথুন, শাহরিয়ার নাফিস, সোহাগ গাজী ও নাজমুল অপু। আগের দুই ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংস ও সিলেট সিক্সার্সের কাছে হারলেও এ ম্যাচে পাল্টে যেতে পারে চিত্র। ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন গেইল কিংবা ম্যাককালামই। রাখ ঢাক না করে সরাসরি ক্যারিবীয় কিংবদন্তি বলে দিয়েছেন, ‘আশা করছি আগামীকালের (আজ) ম্যাচটি জিততে পারব।’

এর আগেও বিপিএলে খেলেছেন গেইল। টি-২০তে তার ১৮ সেঞ্চুরির মধ্যে তিনটি বিপিএলে করা। তাই এবারের আসরেরও অংশ হতে পেরে রোমাঞ্চিত ক্রিকেট সম্রাট, ‘আবারও বিপিএলের অংশ হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এবার আমি নতুন আরেকটি দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমার বিশ্বাস খুব ভালোভাবে শুরু করতে পারব।  আর ভালো খেলতে পারলে দল জয়ের ধারায় ফিরবে আশা করি।’

২০১৩ সালে মাশরাফির ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সে খেলেছেন গেইল। সিলেটের বিরুদ্ধে  ৫১ বলে ১১৪ রানের একটি মারকাটারি ইনিংসও খেলেছেন। তার আগের আসরে বরিশাল বার্নার্সের দুই দুটি সেঞ্চুরি করেছেন। এবার আবারও মাশরাফি দলে গেইল। নড়াইল এক্সপ্রেসকে ক্যাপ্টেন হিসেবে পেয়ে খুশি ক্যারিবীয় মারকুটে ব্যাটসম্যান। তিনি বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি খুবই অভিজ্ঞ।’

ক্যারিবীয় তারকা চান প্রথম ম্যাচ থেকেই ধামাক্কা ব্যাটিং করতে। ওপেনিংয়ে ম্যাককালামকে নিয়ে খেলতে চান বড় ইনিংস। তবে প্রথমে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই বড় কাজ। গেইল বলেন, ‘আমার এবং ম্যাককালামের নতুন প্রমাণ করার কিছু নেই। দুজনেই একই রকম চিন্তা করছি। আমাদের পরিকল্পনাও একই রকম। এখন শুধু কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ভালো করতে হবে।’

শুধু দলের নয়, গেইল-ম্যাককালামের কাছে দর্শকের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। প্রত্যাশার চাপকে উপভোগই করেন গেইল, ‘বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যেকে ম্যাককালাম এবং আমার কাছ থেকে বিনোদন আশা করে। যদিও এটা আমাদের জন্য চাপ। তবে আমরা কিন্তু এমনই প্রত্যাশা করি।’

গেইল খেললে স্টেডিয়ামের গ্যালারি থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। ক্যারিবীয় তারকা কোন দলের হয়ে খেলছেন সেটা বড় বিষয় নয়। দর্শকরা মাঠে আসেন তার তাণ্ডব দেখতে। এই বিষয়টা গেইল বোঝেন। তাই তিনিও দর্শকের কথা চিন্তা করেই ছক্কা-চারের বন্যা বইয়ে দিতে চান। গেইল বলেন, ‘অধিকাংশ সময় আমি দর্শকের বিনোদনের কথা মাথা রেখেই ব্যাটিং করি। তারা তো বিনোদনের জন্যই টাকা খরচ করে টিকিট কেটে মাঠে আসেন। তবে কখনো কখনো আমি সমস্যায় পড়ে যাই, ছক্কা হাঁকাতে পারি না। তবে যেদিন ভালো করি সেদিন প্রত্যেককে খুশি করি আমি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর