একটা জয় ফুটবলে বাংলাদেশকে নতুনভাবে জেগে ওঠার সুযোগ তৈরি করেছে। তা না হলে দীর্ঘদিন জাতীয় দলকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে থাকতে হতো। বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইপর্বে প্রতিপক্ষ লাওস হওয়ায় ফুটবলপ্রেমীরা হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। কেননা তাদেরকে হারানো সামর্থ্য রয়েছে বাংলাদেশের। তবে খুব যে সহজভাবে পার পেয়েছে তাও বলা যাবে না। অ্যাওয়ে ম্যাচে ১-০ গোলে জেতার পরই বাংলাদেশ পরবর্তী রাউন্ডে খেলবে তা অনেকে নিশ্চিত হয়ে যান। ঘরের মাঠে আরও বড় ব্যবধানে জিতবে এ ধারণা অনেকেরই ছিল। কিন্তু ভাগ্য ভালো বলতে হয় জামাল ভুইয়াদের। সেদিন ভালো খেলেও ম্যাচ জিততে পারেনি লাওস। ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়েছিল।
এমনিতেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ম্যাচে কম সুযোগ পায়। এরপর যদি প্রাক-বাছাইপর্ব টপকাতে না পারলে অবস্থা তো করুণ হয়ে যেত। ঘরের মাঠে হয়তো বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ হবে। কিন্তু সেখানে আর মান সম্পন্ন দলগুলো অংশ নেয় না। দীর্ঘদিন ভালো বা শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে না খেলা মানে ছন্দের পতন ঘটা। সেই যাত্রা থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। যা বড় প্রাপ্তিই বলা যায়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শেষের পরই প্রাথমিকভাবে খেলোয়াড় বাছাই করে কোচ জেমি ডের প্রশিক্ষণে ক্যাম্প শুরু হয়ে যাবে। ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এই স্বপ্নের আসরে সুযোগ পেতে হলে তো বাছাইপর্বে খেলতে হবে। বিশ্বকাপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এশিয়া অঞ্চলে বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ই’ গ্রুপে খেলবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ কাতার, ওমান, ভারত ও আফগানিস্তান। এক গ্রুপে পাঁচ দল। সেক্ষেত্রে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতি একটি দলকে আটটি ম্যাচ খেলতে হবে। ১৯৮৫ সালের পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে ভারতকে। ব্যস্ত সময় কাটবে ফুটবলারদের। আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা চাট্টিখানি কথা নয়। তাছাড়া বাছাইপর্বে নামার আগে বাফুফে হয়তো দেশ-বিদেশে ফুটবলারদের প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যবস্থা করবে। ফুটবলে মান অবনতির পেছনে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলাকেই দায়ী করা হয়। কথাটা সত্য। কেননা মানের কারণে অনেকে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে রাজি হয় না। এখন তো সুযোগ এসেছে বেশ কটি ম্যাচ খেলার। ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রায়ই দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে বাছাইপর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতারকে পাচ্ছে। ওমানও এশিয়ার সেরা দল। দুই দলের পক্ষে ম্যাচ জেতাটা কঠিন। কিন্তু ভালো দলের কাছে অনেক কিছু শেখার তো আছে। ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষেও দুবার করে লড়বে। একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, কোচ জেমি ডে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ কোনো ট্রফি জিততে পারেনি। কিন্তু মানতো কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তানা হলে এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে সুযোগ পেল কীভাবে? বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সুযোগ মিলল কেন?
আস্তে আস্তে মাঠে ফুটবলারদের জড়তা কেটে যাচ্ছে। প্রথম পর্বে যেখানে দম ফেল, সেখানে এখন পুরো ম্যাচেই উজাড় হয়ে খেলছে। এখন আবার একাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। নতুনভাবে জেগে ওঠার এই তো সময়। বাফুফের সমালোচনা কম হয় না। কিন্তু ফুটবল উন্নয়নে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশে শুধু প্রীতিম্যাচ নয়- দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন করছে। আরেক বিষয় যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্লাবগুলোও সাফল্যর স্বাক্ষর রাখছে। এএফসি কাপ বাছাইপর্বে ঢাকা আবাহনী গ্রুপপর্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে উঠেছে। গত বছর মালদ্বীপ চ্যাম্পিয়ন নিউ রেডিয়ান্টকে বিধ্বস্ত করেছিল বসুন্ধরা কিংস।
লিগে বিদেশির পাশাপাশি গোল পাচ্ছেন স্থানীয়রা। সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ফুটবলাররা। সামনে বিশ্বকাপ ফুটবলে আট ম্যাচ। প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে নিশ্চিত। ভয় কাটাতে এসব খেলা জামালদের শক্তির টনিক জোগাবে আশা করা যায়। যা কাজে লাগবে ব্যর্থতায় থাকা সামনের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে।