ইডেনের সবুজ ঘাসের উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রক্ষণব্যুহ ও প্রতিরোধ এতটাই দুর্বল ছিল যে, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সম্বরণ ব্যানার্জি বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের চেয়ে বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলও শক্তিশালী!
দেড়শ বছরের পুরনো ইডেনে পা রাখতেই নীরবতা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেললো! সুনশান পরিবেশ। প্রবেশ পথে নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া গোটা স্টেডিয়ামে আর কেউ নেই। হাতে গোনা কয়েকটি চিল মাঠে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। ভারত তথা গোটা এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো ক্রিকেট স্টেডিয়ামটিকে দেখে বোঝার বিন্দুমাত্র উপায় নেই, ২৪ ঘণ্টা আগে মুমিনুলবাহিনীর উপর কতটা ঝড় বয়ে গিয়েছে। বোঝার কোনো উপায় নেই, ঈশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ শামি, উমেশ যাদবদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে কতটা অসহায় ছিলেন ইমরুল, সাদমান, মুমিনুলরা। তিন ভারতীয় গোলাপি রঙের ছোট্ট চর্মাকার বলটির লাগাতার আক্রমণে বারবার ফুটে উঠছিল টাইগার ক্রিকেটারদের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখগুলো। ইডেনের সবুজ ঘাসের উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রক্ষণব্যুহ ও প্রতিরোধ এতটাই দুর্বল ছিল যে, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সম্বরণ ব্যানার্জি বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের চেয়ে বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলও শক্তিশালী! টেস্ট শেষ হতেই রাতে কলকাতা ছেড়ে যান ঢাকায় চলে যান অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও আল আমিন। গতকাল সকালে গেছেন নাঈম হাসান ও কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো।
ভুলই বলেছেন সম্বরণ। ঘরের মাঠে এই ক্রিকেটাররাই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বসেরা দলগুলোকে হারিয়েছে। ভারতের মাটিতে এসেই ছন্দ হারিয়ে ফেলেন মুশফিকরা। হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে গতিশীল বোলারদের বিপক্ষে টেস্ট মেজাজের মানসিকতায় ব্যাটিং করতে পারেনি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ইন্দোরে তিন দিনে হেরে যায়। কলকাতায় হারে সোয়া দুই দিন। অপরিচিত গোলাপি বলের বাউন্স ও গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। ঈশান্ত-যাদব-শামি আগ্রাসী বোলিং করে বাংলাদেশের দুই ইনিংসের ১৯ উইকেটের সবগুলোই নিয়েছেন। হ্যামস্ট্রিংয়ের টান পড়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদুল্লাহ ব্যাট করেননি। তিন ভারতীয় বুলেট গতির বোলিংয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১০৬ রানে। ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩০.৩ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকুরের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৭৪ রান। বাংলাদেশ করেছিল ১৯৫ রান। ওভার খেলেছে ৪১.১ ওভার। সব মিলিয়ে দুই ইনিংসে বাংলাদেশ খেলেছে ৭১.৪ ওভারে। নিজেদের ১৯ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এরচেয়ে কম ওভার ব্যাটিং করেনি আর কখনো।
বাংলাদেশ হেরে যায় সোয়া দুই দিনে। টাইগাররা প্রতিবেশী দেশে সফর করে দুই সিনিয়র সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়া। কোনো সন্দেহ নেই দুই ক্রিকেটারের অনুপস্থিতি দলের শক্তি হ্রাস করেছে। কিন্তু বাকি ক্রিকেটারদের মানসিকতায় কোনো লড়াকু মেজাজ ছিল না। ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছেন, ‘সাকিব ও তামিম ছাড়া বাংলাদেশের শক্তি অনেক কমে গেছে। তাদের ছাড়া ভালো করা সম্ভব নয় দলের ভালো করা। তারপরও আমি মনে করি, টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।’
কলকাতা টেস্টে টাইগার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধুমাত্র মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ যা একটু লড়াই করেছেন। বাকিদের মানসিকতা ছিল পলায়নপরতা। কোনোভাবেই প্রতিপক্ষর উপর চড়া হতে পারেনি। ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণের মধ্যে বোলাররা ছিলেন অনেকটাই উজ্জ্বল। এবাদত হোসেন ৩ উইকেট ও আল আমিন নেন ২ উইকেট। আবু জায়েদ রাহীও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন সুইংয়ে। সমীহ আদায় করেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। গোলাপি বলে দলের অসহায় আত্মসমর্পণের গল্পের মধ্যে রাহী স্বাগত জানান, ‘গোলাপি অবশ্যই ভালো। যেহেতু বলটা একটু সুইং করে, আমাদের জন্য ভালো। পেস বোলারদের জন্য স্পেশালি ভালো। কলকাতা টেস্ট থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। আশা করি ভবিষ্যতে ভালো করব।’
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল, সময় বলবে। কিন্তু তার আগে যা সবচেয়ে জরুরি, সেটা হচ্ছে গতি, বাউন্সের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের মানসিকতা।