বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘বর্ণময়’ ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল। হ্যালির ধূমকেতুর মতো আগমন। ৪০ বছর বয়সি আশরাফুলের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ক্রিকেটার আশরাফুল এখন অতীত। মোহাম্মদ আশরাফুল; মানে নতুন কিছুর শুরু। নতুন ক্যারিয়ার শুরু করেছেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্ব কনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। ক্রিকেট গুরু ওয়াহিদুল গনিকে দেখে কোচিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ওয়াহিদুল গনির গড়া অঙ্কুর ক্রিকেট একাডেমি থেকে চারজন টেস্ট ক্রিকেটার বেরিয়েছে। একাডেমির দুই ক্রিকেটার আশরাফুল ও শাহরিয়ার নাফিস আবার দেশকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। ক্যারিয়ার শেষে শাহরিয়ার এখন চাকরি করছেন। আশরাফুল বেছে নিয়েছেন কোচিং পেশা। এর ব্যাখ্যা দেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল, ‘এক সময় ক্রিকেট খেলেছি। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমি মনে করি দেশে ভালো কোচ থাকা উচিত। এজন্যই ক্রিকেটার ক্যারিয়ার শেষে কোচিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমার কোচিংয়ের মূল উদ্দেশ্য, ক্রিকেটার তৈরি করা।’
কোচিং ক্যারিয়ার হঠাৎ শুরু করেননি। ২০২৩ সালে টি-২০ স্পোর্টস চ্যানেলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বিশ্লেষণ করেছেন। তখনই আশরাফুল সিদ্ধান্ত নেন কোচ হবেন। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের তত্ত্বাবধানে লেবেল-৩ করা আশরাফুল রংপুরের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট গ্লোবাল সুপার লিগ (জিএসএল)। প্রথম আসরেই বাজিমাত। বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বমঞ্চে কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে রংপুর। কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেছেন রংপুরের পক্ষে। কিন্তু স্বপ্ন আকাশছোঁয়ার। যদিও দ্রুতই আকাশ ছুঁতে চাইছেন না ৬১ টেস্টে ২৭৩৭ রান, ১৭৭ ওয়ানডেতে ৩৪৬৮ এবং ২৩ টি-২০ ম্যাচে ৪২০ রান করা এবং তিন ফরম্যাটে ৯ সেঞ্চুরি হাঁকানো আশরাফুল, ‘বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেছি। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছি। অবশ্যই স্বপ্ন রয়েছে দেশকে কিছু উপহার দেওয়ার। তবে এখনই হেড কোচ কিংবা ব্যাটিং কোচ হতে চাই না। মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছি। তবে স্বপ্ন অবশ্যই বড়।’
নিজেকে আরও পরিণত ও শানিত করতে ধানমন্ডি ক্রিকেট একাডেমি ও গুলশান ইয়ুথ ক্রিকেট একাডেমিতে কোচিং করাচ্ছেন।
ভালোমন্দ মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ করেছে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে ১-১, ওয়ানডেতে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। টি-২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে ক্যারিবীয়দের। সফরে হাতেগোনা কয়েকটি ইনিংস ছাড়া নতুন বলে ক্রিকেটাররা ভালো খেলতে পারেননি। নতুন বলে খেলতে না পারার ব্যাখ্যা দেন আশরাফুল, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নতুন বলে ভালো করতে প্রত্যেক ক্রিকেটারের একটি আলাদা পরিকল্পনা থাকতে হবে। নতুন বলে ভালো করতে সবচেয়ে বেশি দরকার ভালো টেকনিক। ক্রিকেটারদের ডিফেন্স শক্তিশালী হতে হবে। ক্রিকেটারদের অনেক ক্যালকুলেটিভ হতে হবে।’
নিজে এখন কোচ। মিকি আর্থারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। আর্থারকে অসম্ভব ভালো কোচ মনে করেন আশরাফুল, ‘মিকি আর্থার খুবই ভালো মানের কোচ। আমি কোচিংয়ে এসেছি, তিনি খুশি হয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ১৫ দিন ভালো কেটেছে। ভীষণ সহযোগিতামূলক কোচ। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সে একসঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি।’
মোহাম্মদ আশরাফুল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ক্যারিয়ারে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন। বহু বড় বড় বোলারকে সামলেছেন। এখন তিনি তাঁর অভিজ্ঞতাগুলো নতুন ক্রিকেটারদের মাঝে শেয়ার করতে চান।