আমার রক্তে ক্রিকেট। আমি সবসময় মনেপ্রাণে ক্রিকেট উন্নয়নের কথা ভেবেছি। এখন দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন সভাপতির কাছে অনুরোধ, তিনি যেন ক্রিকেট উন্নয়নেই মনোনিবেশ করেন - ফারুক আহমেদ
ফারুক আহমেদের বিপক্ষে অনাস্থা আনেন আট পরিচালক। তাদের সাতজনই ছিলেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বোর্ড পরিচালক। তৎকালীন সরকারের সময় যতটুকু সুযোগসুবিধা নেওয়া যায়, তার সবটুকুই তারা নিয়েছেন। জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে সেসব পরিচালকও অবস্থান পাল্টে টিকে যান বোর্ডের বর্তমান কমিটিতে। এরপর জোটবদ্ধ হয়ে গত পরশু ফারুক আহমেদের বিপক্ষে অনাস্থা আনেন। বিসিবির ইতিহাসে কখনোই দেখা যায়নি বোর্ড সভাপতির বিপক্ষে পরিচালকদের অনাস্থা আনতে। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের বিপক্ষে লিখিত অভিযোগ করেন আট পরিচালক। তাদের অভিযোগের ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ফারুক আহমেদকে পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এনএসসি বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর ফারুক জানান, তিনি পদত্যাগ করেননি। তার বিপক্ষে আনীত অভিযোগে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অবশ্য নতুন সভাপতিকে ক্রিকেট উন্নয়নের দিকেই মনোযোগী হতে বলেন, ‘আমার রক্তে ক্রিকেট। আমি সবসময় মনেপ্রাণে ক্রিকেট উন্নয়নের কথা ভেবেছি। এখন দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন সভাপতির কাছে অনুরোধ, তিনি যেন ক্রিকেট উন্নয়নেই মনোনিবেশ করেন।’
পরিচালকদের ভোটে আমিনুল ইসলাম বুলবুল গতকাল সন্ধ্যায় বিসিবির নতুন সভাপতি হয়েছেন। ফারুককে পরিচালকের পদ বাতিলের পর গতকাল বিকালে (এনএসসি) বুলবুলকে পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়। এরপর পরিচালকরা জরুরি বৈঠক করে ভোটে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবির ১৬তম সভাপতি পদে নির্বাচিত করেন। বিসিবির ইতিহাসে বুলবুল দ্বিতীয় সভাপতি, যিনি এক সময় জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও অধিনায়ক ছিলেন। ফারুক আহমেদ প্রথম সভাপতি যিনি জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও অধিনায়ক ছিলেন।
ফারুক আহমেদকে সভাপতি আর দেখতে চায় না সরকার, এমন আভাস দিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিসিবির সাবেক সভাপতি কারণ জানতে চেয়েছিলেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার। কোনো উত্তর না পেয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে জানান। এরপরই সবকিছু পাল্টে যায়। ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে আট পরিচালক তার প্রতি অনাস্থা ও বিপিএল নিয়ে সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা স্বাভাবিক রাখার কথা উল্লেখ করেছে এনএসসি।
৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিসিবির সভাপতির পদেও পরিবর্তন আসে। আগের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করেন। ২১ আগস্ট তার জায়গায় নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। এরপর ৯ মাস দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তার বিপক্ষে বিস্তর অভিযোগ ছিল। তিনি স্বেচ্ছাচারী, কর্তৃত্ববাদী। এমনকি কোনো পরিচালকের কথা শুনতেন না। পরিচালকদের পাত্তা না দিয়ে যে কোনো বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নিতেন। কারও সঙ্গে কথা না বলে তিনি বিসিবির ব্যাংক ডিপোজিটের অর্থ অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করেন। শুধু তাই নয়, তার বিপক্ষে অভিযোগ, তিনি গঠনতন্ত্র সংশোধন ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে উদ্যোগী হননি। বিসিবির তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ না দিয়ে তার পছন্দের নিম্নমানের ও অনিবন্ধিত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে কাজ দিয়েছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি শুধু হেসেছেন। বলেন, ‘আমি ক্রিকেট উন্নয়নের জন্যই কাজ করেছি। আমি একজন ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেটের উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিয়েছি।’
তার বিপক্ষে অনাস্থা স্থাপনকারীরা আগের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সময়েও কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করেননি। এবারও শুরুতে ফারুকের কার্যক্রমের প্রতিবাদ করেননি। হঠাৎ করেই জোটবদ্ধ হয়ে ফারুক আহমেদের বিপক্ষে অনাস্থা এনেছেন পরিচালকরা। এখন দেখার বিষয়, তিনি বোর্ডের নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সঙ্গে কতটা মানিয়ে কাজ করেন।