আলোর স্বল্পতা ও বৃষ্টিতে চতুর্থদিন খেলা বন্ধ করে দেন দুই আম্পায়ার আহসান রাজা ও কুমার ধর্মসেনা। স্কোর বোর্ডে তখন ইংল্যান্ডের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান। ওভাল টেস্ট জিততে ইংলিশদের দরকার আরও ৩৫ রান! হাতে ৪ উইকেট। মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া ক্রিকেটপ্রেমিরা তো বটেই, দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেও একটা হালকা বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল, ম্যাচটি জিতবে ইংল্যান্ড! অভাবনীয় ছিল না এমন ভাবনা। শুধু একজন ভারতীয় ক্রিকেটার অন্য ভাবনায় ঘুমাতে যান। মোহাম্মদ সিরাজ; ডান হাতি ফাস্ট বোলার ঘুমাতে যান মির্যাকল কিছুর স্বপ্ন নিয়ে। তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন নিজের ওপর। পঞ্চম দিন সকালে ওভালের আন ইভেন উইকেটে বল করবেন, তার গতিতে নাকাল হবেন ইংলিশ ব্যাটাররা। জয়োচ্ছ্বাসে মাতবেন তিনি এবং তার দল ভারত। ডান হাতি ফাস্ট বোলারকে এই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, তার মোবাইল স্ক্রিনের ওয়ালপেপারে লাগানো ‘বিলিভ’ শব্দটি। পারবেন-এ বিশ্বাস নিয়ে নতুন উদ্দীপনায় বোলিং করেন। এরপর বাকি সব ইতিহাস। তাকে সাহচার্য দেন আরেক পেসার প্রাসিদ কৃঞ্চা। দুজনের সাঁড়াশি আক্রমণে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা ভারত তুলে নেয় ৬ রানের অবিশ্বাস্য, কল্পনাতীত এক জয়। ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে খেলতে নেমে স্বাগতিক ইংল্যান্ড অলআউট ৩৬৭ রানে।
স্বপ্নের এ জয়ে ৫ টেস্ট ম্যাচ সিরিজ ড্র হয়েছে ২-২। লিডসে সিরিজের প্রথম টেস্ট ইংল্যান্ড জিতেছিল ৫ উইকেটে। বার্মিংহামে দ্বিতীয় টেস্ট ৩৩৬ রানে জিতে সমতা আনে ভারত। লর্ডসে তৃতীয় টেস্ট ২২ রানে জিতে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ড্র হয় ম্যানচেস্টার টেস্ট। ওভালে পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ভারত জয় পায় ৬ রানে। এটা নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয় ভারতের। ২০০৪ সালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে ১৩ রানে ভারত হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। প্রথম ইনিংসে ৪টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন সিরাজ। ম্যাচসেরা সিরাজ হতে পারতেন খলনায়ক। জীবন হয়ে উঠতে পারত দুর্বিষহ। ব্যক্তিগত ১৯ রানে হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ নেন। কিন্তু বল ধরে সীমানা দড়ির ওপারে চলে যান সিরাজ। বেঁচে যান ব্রুক। এরপর খেলেন ৯৮ বলে ১১১ রানের ইনিংস। আউট হয়েছেন সিরাজের হাতে ক্যাচ হয়ে। তিনি ও জো রুট দুজনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৯৫ রান। দুজনেই সেঞ্চুরি করেন। যতক্ষণ দুজনে ব্যাটিং করছিলেন, ম্যাচ হেলেছিল স্বাগতিকদের দিকে। দুজনে আউট হওয়ার পরও ম্যাচ হেলেছিল ইংলিশদের দিকে। কিন্তু ক্রিকেট হচ্ছে, চরম নাটকীয় খেলা। গতকাল পঞ্চমদিন সকালের নাটকীয়তায় ভারত জিতল অবিশ্বাস্যভাবে এবং ক্রিকেটপ্রেমীরা উপভোগ করেন স্বপ্নের এক টেস্ট। টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতের সংগ্রহ ২২৪। ইংল্যান্ডের সংগ্রহ প্রথম ইনিংসে ২৪৭ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত অলআউট হয় ৩৯৬ রানে। ৩৭৪ রানের টার্গেটে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ৩৬৭ রানে।
ম্যাচসেরা সিরাজ ৫ টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ২৩টি। সিরিজসেরা হয়েছেন যুগ্মভাবে ভারতের অধিনায়ক শুভমান গিল ও ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক। রোহিত শর্মার হঠাৎ অবসরে ভারতের নেতৃত্ব পান শুভমান। সিরিজে তিনি ৫ টেস্টে ৪টি সেঞ্চুরিসহ রান করেন ৭৫৪। আরেক সিরিজসেরা ব্রুক রান করেন ২টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৮১। অবিশ্বাস্য ম্যাচ জেতানোর নায়ক সিরাজ বলেন, ‘আজ (গতকাল) ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হয়েছে এটা সম্ভব। গুগল থেকে একটি ছবি (ফোনে) ডাউনলোড করেছি, যেখানে লেখা ‘বিলিভ’। লর্ডসে হৃদয় চূর্ণ হয়েছিল। রবীন্দ্র জাদেজা ভাই বলেছিলেন, নিজের শক্তির ওপর আস্থা রেখে বাবাকে স্মরণে রাখতে এবং তার জন্য এটা করতে।’ ব্রুকের ক্যাচ ছাড়ার পর অনুভূতি প্রকাশ করেন সিরাজ, ‘সত্যি বলতে ক্যাচটা ছক্কা হবে এটা ভাবিনি। তবে ওটা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মুহূর্ত ছিল। হ্যারি ব্রুক তারপরই টি-২০ মানসিকতায় (ব্যাট) করেছে। আমরা তখন একটু পিছিয়ে পড়েছিলাম।’
ওভাল টেস্টে ভারতের জয়
ভারত : প্রথম ইনিংস, ২২৪ ও দ্বিতীয় ইনিংস, ৩৯৬
ইংল্যান্ড : প্রথম ইনিংস, ২৪৭ ও দ্বিতীয় ইনিংস, ৩৬৭/১০, ৮৫.১ ওভার (জো রুট ১০৫, হ্যারি ব্রুক ১১১, অ্যাটকিনসন ১৭। আকাশদ্বীপ ২০-৪-৮৫-১, প্রাসিধ নারায়ণ ২৭-৩-১২৬-৪, মোহাম্মদ সিরাজ ৩০.১-৬-১০৪-৫)।
ফল : ভারত ৬ রানে জয়ী
সিরিজ : ৫ ম্যাচের সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ
ম্যাচসেরা : মোহাম্মদ সিরাজ
সিরিজসেরা : হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড), শুভমান গিল (ভারত)