কানের যত্ন দুভাগে বিভক্ত; বাইরের অংশের যত্ন সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য আর ভেতরের অংশ শ্রবণশক্তি রক্ষা করার জন্য। ইনফেকশন, বধিরতা অথবা কানের যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার উপায়সমূহ আমাদের সবারই জানা উচিত।
১. কানে আঘাত লাগা থেকে দূরে থাকুন। যদি কেউ কনট্যাক্ট স্পোর্ট যেমন- রেসলিং বা বক্সিং এ অংশগ্রহণ করেন, তাদের অবশ্যই কান রক্ষাকারী সরঞ্জাম সংযুক্ত হেডগিয়ার পরিধান করা উচিত। কানের বহিরাংশে বারংবার আঘাতের ফলে কোমলাস্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কান বিকৃত রূপ ধারণ করে কলিফ্লাওয়ারের মতো হতে পারে। ২. কান ফুটো করার সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে কোমলাস্থি ফুটো করার ক্ষেত্রে। একটি ইনফেকটেড ফুটো কানের বহিরাংশের চিরস্থায়ী ক্ষতিসাধন করে, যা কানের দুলের সৌন্দর্যও নষ্ট করে দেয়। ৩. শুধুমাত্র আঙ্গুলে কাপড় পেঁচিয়ে কান পরিষ্কার করুন। কটন সোয়াব বা কোনো কিছুই কানের ভেতরে ঢুকানো যাবে না। যেহেতু আমাদের কর্ণনালী খুবই সরু তাই সোয়াব বা আঙ্গুল, এর ক্ষতি সাধন করতে পারে, যার ফলে এয়ার ড্রামের ভেতরে কানের ময়লা ঢুকে শ্রবণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. কানের ময়লা নিজে নিজেই বের হয়ে আসে। ওয়াক্স যে কোনো ময়লাকে বাইর থেকে কর্ণনালীতে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে এবং আটকিয়ে দিয়ে বাইরে বের করে দেয়। বেশির ভাগ মানুষেরই বাইরে থেকে কানের ময়লা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় না। যদি কারও এয়ার ওয়াঙ্ বেশি হয় এবং তা কানের মধ্যে দৃশ্যমান হয় ও শ্রবণে ব্যাঘাত ঘটায় তবে কয়েক ফোঁটা এয়ার ওয়াঙ্ রিমুভার অথবা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর কয়েক মিনিট পর কান একটি রাবার বাল্ব এবং টেপিড ওয়াটার দিয়ে ফ্লাস করা যেতে পারে।
শ্রবণ সুরক্ষা : কিছু কিছুস্থান এড়িয়ে চলা উচিত যেমন ফায়ারিং রেঞ্জ, রক কনসার্ট এবং কনস্ট্রাকশন সাইট ইত্যাদি, কারণ এসব স্থানে অত্যাধিক শব্দ সৃষ্টির ফলে শ্রবণের ক্ষতি সাধন হয়। কোনো স্থানে যদি কথা শুনানোর জন্য চিৎকার করে কথা বলতে হয়, সে সব স্থানও এড়িয়ে চলুন। কেউ এসব স্থানে যেতে চাইলে এয়ারপ্লাগ ব্যবহার করা উচিত।
যে কোনো কিছুর ভলিউম কমিয়ে রাখা উচিত। টিভি বা ব্যক্তিগত স্টেরিও ডিভাইস খুব উচ্চস্বরে বাজানো উচিত নয়, বিশেষ করে যদি আপনি হেডফোনের সাহায্যে শুনে থাকেন। কারও যদি কানে অস্বস্থিবোধ বা চুলকানি অনুভূত হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কানে ইনফেকশনের ফলে মধ্যকর্ণের এয়ার ড্রাম নষ্ট হয়ে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে যেতে পারে। কেউ যদি প্রায়শই ইনফেকশনে ভুগে থাকেন, তবে চিকিৎসক ওষুধ সেবন বা ছোট কোনো সার্জারি করার পরামর্শ প্রদান করতে পারেন। যে কোনো অসুস্থতা বা ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। কানে ছড়িয়ে যাওয়া থেকে মুক্ত থাকতে, ফুসফুসে সংক্রামকজনিত রোগের চিকিৎসা দ্রুত করা উচিত। কিছু কিছু ওষুধও শ্রবণ শক্তির ক্ষতি করতে পারে, তাই ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়মাবলী মেনে সেবন করা উচিত। কিছু অসুখে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হয়, এতেও শ্রবণ শক্তির ক্ষতি হতে পারে। ধূমপান পরিহার করা উচিত। অধূমপায়ীদের তুলনায়, ধূমপায়ীদের শ্রবণ শক্তি হারানোর ঝুঁকি অনেক বেশি। কেউ যদি হঠাৎ করে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন অথবা মাথার মধ্যে শব্দ শুনতে পান তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এগুলো মারাত্দক অসুস্থতার লক্ষণ, যার দ্রুত চিকিৎসা হওয়া দরকার।
লেখক : জেনারেল ম্যানেজার, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা।