মনের আলাদা একটা জগৎ আছে। শারীরিক সামর্থ্য যেখানে ব্যর্থ মন সেখানেও সফল হতে পারে। এর শক্তির শেষ নেই। তবে ইচ্ছা করলেই এ শক্তি ব্যবহার করা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সাধনার। একজন মানুষের যে দ্বৈত সত্তা রয়েছে, তার অন্যতম হলো মন। এ সত্তাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য নিয়মিত অনুশীলনের প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য একাগ্রচিত্তে যেমন ধ্যানের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন ব্যায়ামের মাধ্যমে মনকে যে কোনো একটি বিষয়ের ওপর স্থির রাখার প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে। পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগের অন্যতম হলো ধারণ। ষষ্ঠ এই ব্যায়ামের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে পূর্ণরূপে আত্দপ্রকাশ করতে পারে। আত্দশক্তিতে আরও বেশি বলীয়ান হতে পারে। বাহ্যিক শক্তির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারে আত্দিক শক্তিকেও।
ধারণ হলো মনোসংযোগ বা একাগ্রতা। এর অর্থ হচ্ছে কোনো একটা বিশেষ বস্তু, বিন্দু বা অন্য কোনো বিষয়ের ওপর মনকে স্থিত করার অনুশীলন। পতঞ্জলির মতে, কোনো বিশেষ জায়গায় চিন্তাগুলোকে আবদ্ধ করাই একাগ্রতা। যে কোনো বিন্দুই হতে পারে তা। মোমের শিখা কিংবা কোনো ফুলের বিশেষ কোনো পাপড়ি বা কোনো মন্ত্রের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চিন্তাগুলোকে একমুখী করার নামই ধারণ। একমুখী এ চিন্তা করা সম্ভব হলে মনের শক্তি হাজারো লাখো গুণ বেড়ে যায়। এর ফলে যে কোনো সমস্যায় মন স্থির থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সহজেই। ধারণ অনুশীলনের মাধ্যমে বলপ্রয়োগহীন অনায়াস একাগ্রতা অর্জন করা সম্ভব। সময় প্রবাহের বোধশূন্যতাই মনঃসংযোগকে একাগ্র করে তোলে। মনের এ ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামর্থ্য অনেক। অনেক সময়ই বাহ্যিক শক্তি প্রয়োগে যা সম্ভব হয় না তা মনের জোরে করা সম্ভব হয়। শারীরিক সুস্থতাও অনেকটা নির্ভর করে মানসিক শক্তির ওপর। কেউ যদি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাকে সুস্থ করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। মনের শক্তি বৃদ্ধি করা এ জন্যই প্রয়োজন। পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগের ষষ্ঠ ব্যায়াম ধারণের নিয়মিত অনুশীলন মানুষের মনকে সেই শক্তি এনে দিতে পারে।