বাংলাদেশ এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে এসিসির সভায় কোনো দেশ আপত্তি তোলেনি। দুবাইতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসির গুরুত্বপূর্ণ সভা। দুই দিনব্যাপী এ সভায় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশে টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে কোনো দেশ আপত্তি করবে কিনা? বিশেষ করে পাকিস্তানের দিকে দৃষ্টি সবার। সাম্প্রতিককালে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা হলেও ফাটল ধরেছে। তাছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন মহল পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পণ্য বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে। যাক আইসিসির সভাতেও কোনো দেশ যদি বাংলাদেশে আসতে আপত্তি না জানায় তারপরও এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে তা শতভাগ নিশ্চিত নয়। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর। গত দুই মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হলেও উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হচ্ছে না। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সুষ্ঠুভাবে জানিয়ে দিয়েছে প্রহসনমূলক নির্বাচন বাতিল করে আলোচনায় না বসলে তারা অবরোধের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে সরকার বলছে আলোচনা করা যায় তবে মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যাবে না অর্থাৎ পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এশিয়া কাপ চলাকালে যদি রাজনৈতিক হাঙ্গামা অব্যাহত থাকে তখন এসিসির সভায় আপত্তি না করলেও নিরাপত্তার কারণে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো না আসতে পারে। এশিয়া কাপ সমস্যা মানে টি-২০ বিশ্বকাপে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। এই অবস্থায় উচিত হবে শান্তির সমঝোতা। বিশেষ করে দুই টুর্নামেন্ট চলাকালে দেশে যেন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া। এ জন্যে সরকারের উচিত হবে বিএনপির কাছে সহযোগিতা চাওয়া। শোনা যাচ্ছিল ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা সরাসরি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতার কথা বলবেন। কিন্তু তা এখনো হয়নি। বোর্ড থেকে জানা গেছে অবশ্যই তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ করবেন। কিন্তু সেখানে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যাবেন না। কথা হচ্ছে খালেদা জিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ নেত্রীর সঙ্গে বোর্ড সভাপতি ছাড়া বৈঠকে বসতে বিএনপি রাজি হবে কিনা। এ ক্ষেত্রে উচিত ছিল খালেদা জিয়ার সঙ্গে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী দেখা করে সহযোগিতা চাওয়া। কিন্তু আপাতত ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কেউ নেই বলে অবিলম্বে বোর্ড সভাপতির বিএনপি চেয়ারপাসনের সঙ্গে দেখা করা। প্রশ্ন হচ্ছে সহযোগিতা চাইলেই বিএনপি এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপ ঘিরে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রাখবে কিনা? এ ব্যাপারে বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) লতিফ খান বলেন, বাংলাদেশে দুই টুর্নামেন্ট সুষ্ঠুভাবে হোক তা বিএনপি মনে-প্রাণে চাই। কারণ এটা পুরো দেশের ভাবমূর্তির ব্যাপার। কোনো কারণে যদি টুর্নামেন্ট না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা কেউ মুখ দেখাতে পারব না। সহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে দেখুন আমরাতো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি। এ জন্য তো কিছুদিন আগে আমি নিজেই মিরপুরে বোর্ড অফিসে ছুটে যাই। আমাকে পাপন ভাই বললেন, ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করবেন, সেই ব্যবস্থা করে দিতে। আমিতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তাদের চিঠি নিয়ে আমি গুলশানে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। আমি নিশ্চিত দেখা হলে ম্যাডাম বলতেন সমস্যা নেই ওদের দেখা করতে বলো। দেখেন রাজনীতি দ্বন্দ্ব থাকবেই কিন্তু খেলাধুলার সঙ্গে এরতো কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া যেখানে দেশের ভাবমূর্তি জড়িয়ে আছে সেখানে বিএনপি অবশ্য সহযোগিতা করবে। অথচ বেদনাদায়ক হলেও সত্যি যে বিষয়টি এখনো আমি ম্যাডামকে জানাতে পারেনি। সেদিন তার বাসায় ঢুকতে গেলে পুলিশ বাধা দেন। এখন যে যাবো তাও উপায় নেই। কারণ ম্যাডামের বাসায় বিএনপি নেতা-নেত্রীরা ঢুকতেই পারছেন না। কাছে গেলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। সুতারাং সুষ্ঠু পরিবেশই যদি তৈরি করা না হয় তাহলে বিএনপি সহযোগিতা করবে কীভাবে? আর প্রহসনমূলক নির্বাচন করার পরতো পুরো দেশবাসী ক্ষুব্ধ। এখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। সুতরাং সরকার বা বিসিবির উচিত হবে অবিলম্বে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া। আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য বিএনপি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব সরকারেরই।